সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের সুতারগোপটা বাজার ও আশপাশের এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র জলাবদ্ধতা। এতে দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। বুক সমান পানিতে ডুবে গেছে আশপাশের ফসলি জমি। কৃষকরা জানান, গত বছরের মতো এবারও আমন চাষ নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের পূর্ব পাশে একটি খাল রয়েছে। এ খালের বিভিন্ন অংশে চলাচলের জন্য রাস্তা রয়েছে। বেশ কয়েকটি সরু কালভার্ট, চুঙ্গা আছে। এ ছাড়া মিয়ারবেড়ী, সুতারগোপটা বাজারের পূর্ব পাশের অধিকাংশ দোকানই খালের ভেতর। একই সঙ্গে এ খালে প্রচুর কচুরিপানাসহ বর্জ্য রয়েছে। যার কারণে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বৃষ্টির পানি জমে খালসহ আশপাশের এলাকা ডুবে গেছে। কোনোভাবেই পানি সরছে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুতারগোপটা বাজারের ৮টি দোকানের ৩ ভাগের দুই ভাগই খালের ভেতর। বাজার থেকে পূর্বপাশের ব্রিজের দিকে তাকালেই দেখা যায় প্রায় ২৫ ফুট চওড়া একটি খালের ১০ ফুট জুড়ে লম্বায় কয়েকটি জরাজীর্ণ দোকানঘর। এক প্রভাবশালীরা ওই ঘরগুলো নির্মাণ করেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ ছাড়া একই খালের চলাচলের জন্য ৫-৭ ফুটের কয়েকটি কালভার্ট করে পথ বানিয়েছে স্থানীয়রা। একই এলাকার গণকবরের সামনে রাস্তায় প্রায় ২ ফুট পানি জমে আছে। আশপাশে যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। ওই এলাকায় ফাইভ স্টার নামে একটি কিন্ডারগার্টেন ডুবে গেছে জলাবদ্ধতায়। এতে গত কয়েকদিন সেখানে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। সামনেই দুটি ঘরে এখন পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা। আশপাশের প্রতিটি গ্রামীণ রাস্তা হাঁটু থেকে কোমর পরিমাণ পানিতে ডুবে আছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
কৃষক ইসমাইল হোসেন ও নাজমুল হক জানায়, আমন বীজতলা ডুবে গেছে। গত বছর ৩ বার বীজতলা করেও আবাদ করতে পারিনি জলাবদ্ধতার কারণে। এবারও জমিতে কোমর থেকে বুক পর্যন্ত পানি। খাল-বিল অবৈধ দখলের কারণে বৃষ্টির পানিতে আশপাশের জমিগুলো ডুবে থাকে। পানি নিষ্কাশন না হলেও এবারও আবাদ করা সম্ভব হবে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জহির আহমেদ বলেন, ৩৭৫ হেক্টর জমির আমনের বীজতলা পানিতে ডুবে গেছে। এসব বীজতলা নষ্ট হয়ে যাবে। চাষাবাদের জন্য পানি কমলে ফের বীজতলা করতে হবে। ১১০০ হেক্টর জমির আউশ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ২০০ হেক্টর জমিতে শাক-সবজি চাষাবাদ হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৯৫ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত আছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হলে কৃষক বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
সুতারগোপটা এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদ আলম রানা।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান বলেন, মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। এখানে জোয়ারের পানি প্রবেশের সুযোগ নেই। বৃষ্টির পানিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অসংখ্য অবৈধ দখলদার আছে, প্রয়োজনের তুলনায় ছোট কালভার্ট রয়েছে, খাল দখল করে মানুষ বাড়িঘরে যাওয়ার জন্য কিছু রাস্তা করেছে, এজন্য পানি বের হতে পারছে না। আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করব। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম আমাদের চলমান রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার ঘটনাটি আমরা প্রশাসনকে অবহিত করব। দ্রুত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পারলেই এ সমস্যা কেটে যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :