লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভায় ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রশাসকের কক্ষ ও হলরুমের সংস্কারসহ বিভিন্ন সাজসজ্জার কাজ কোটেশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও হিসাব রক্ষকের দুই শ্যালক এবং এক প্রতিবেশীর মালিকানাধীন তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। এতে স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
পৌরসভা সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এবং রাজস্ব তহবিল (আরইভি) থেকে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ২৮ লাখ টাকা। এতে প্রশাসকের কক্ষ ও হলরুমে রং, টাইলস, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, এসি, ডেকোরেশন ও আসবাবপত্র স্থাপনসহ নানা কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এই প্রকল্পে কাজ পান তিনটি প্রতিষ্ঠান—মাহমুদা করপোরেশন, ইব্রাহিম অ্যান্ড ব্রাদার্স ও মেসার্স মাহমুদ অ্যান্ড রবিন। এর মধ্যে মাহমুদা করপোরেশন পৌর প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাকির হোসেন পাটওয়ারীর শ্যালক, ইব্রাহিম অ্যান্ড ব্রাদার্স হিসাব রক্ষক ইব্রাহিম মিয়ার শ্যালক এবং মাহমুদ অ্যান্ড রবিন স্থানীয় আক্তার হোসেনের মালিকানাধীন, যিনি তাদের প্রতিবেশী বলে জানা গেছে।
কাজের মূল্য নির্ধারণে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন পৌরসভার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন কর্মকর্তা। তাদের ভাষ্য, প্রকৌশলীর সঙ্গে সমন্বয় করে উচ্চমূল্যে কাজের সিডিউল তৈরি করা হয়েছে। ২ টনের ৩টি এসির জন্য ধরা হয়েছে প্রায় দেড় থেকে দ্বিগুণ দাম।
ইব্রাহিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের নামে ৯ লাখ ৬২ হাজার টাকার চুক্তিতে ভবনের রং করার কাজ চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে আরও কয়েকটি কাজও চলছে এই প্রতিষ্ঠানের নামে।
মেসার্স মাহমুদ অ্যান্ড রবিনের মালিক আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, কাজটি অফিসের লোকজন করেছেন এবং তাকে বিশ্বাস করে লাইসেন্স ব্যবহার করা হয়েছে।
হিসাবরক্ষক ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ১০ বছর আগে আমার শ্যালক জোবায়েরকে প্রতিষ্ঠান সকল কিছু বুঝিয়ে দিয়েছে। আমি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত না। দ্রুত সময় কাজ শেষ করার জন্য সাবেক প্রশাসকই কোটেশনে তাকে কাজ দিয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহমুদা করপোরেশন প্রশাসনিক কর্মকর্তার শ্যালকের বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাকির হোসেন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমার শ্যালক কি ব্যবসা করতে পারে না? তাকে কাজ দেওয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে। প্রকৌশলী বিস্তারিত বলতে পারবেন।’
এ বিষয়ে সহকারী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘নিয়ম মেনেই বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি।’ তবে, প্রকল্পে শ্যালকদের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’কে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বর্তমান পৌর প্রশাসক এস এম রবিন শীষ বলেন, ‘এই কাজটি আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে যেন এমন কিছু না ঘটে, সে ব্যাপারে পৌরসভাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’
আপনার মতামত লিখুন :