রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুছে ফেলা একটি ম্যুরালের পাদদেশে নির্মিত হচ্ছে জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ। ইতোমধ্যে রাজশাহী নগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে এটির নির্মাণকাজ চলছে। আগামী রোববারের মধ্যে কাজ শেষ করে ৫ আগস্ট সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১ সূত্রে জানা গেছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরের সামনেই জায়গাটি জেলা পরিষদের। ৫ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে এখানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশনে দাবি, এটিই দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে বড় ম্যুরাল। নির্মাণ শেষে ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ-ভারত পঞ্চম সাংস্কৃতিক মিলনমেলায় অংশ নিতে রাজশাহী এসে ম্যুরালটির উদ্বোধন করেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল এবং তৎকালীন সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। এই ম্যুরালটির উচ্চতা ৫৮ ফুট, চওড়া ৪০ ফুট। ম্যুরালের সীমানাপ্রাচীরের দুই পাশে ৭০০ বর্গফুট টেরাকাটার কাজ করা হয়। এক পাশে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের লোকজ সংস্কৃতির নানা চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল। টেরাকাটায় ছিল ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যও ছিল। ল্যান্ডস্কেপিংয়ে গ্রানাইট দিয়ে সজ্জিত করা হয়।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর এই ম্যুরালও আক্রান্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় টেরাকাটাও। তবে ম্যুরালটি ভেঙে ফেলা যায়নি। পরে গেল ফেব্রুয়ারিতে ম্যুরাল থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সাদা রং দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়।
প্রতিকৃতি ছাড়া ম্যুরালটি এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে। সিঅ্যান্ডবি মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, ম্যুরালের পাদদেশে জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ চলছে। এর পেছনে দাঁড়িয়ে প্রতিকৃতি মুছে ফেলা ম্যুরাল। ম্যুরালের নিচের অংশে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। দুপাশে সীমানাপ্রাচীরের সঙ্গে থাকা টেরাকাটার কিছু অংশ তুলে ফেলা হয়েছে। ওপরের অংশে লেখা, ‘জালেমের ওপর অভিশাপ’।
রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম জানান, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন। এর ভিত্তিতে দেশের ৬৪ জেলায় এটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
জুলাইয়ের মধ্যে দ্রুত শেষ করার জন্য কাজ হচ্ছে ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথডে (ডিপিএম)। এটি নির্মাণ করতে ১২ লাখ টাকার মতো খরচ হবে। রাজশাহীর জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভটি হবে ১৮ ফুট উচ্চতার। গণ-অভ্যুত্থানে রাজশাহীর যতজন শহিদ হয়েছেন, তাদের নাম লেখা থাকবে এর ওপরে। গেজেট থেকে তারা পাঁচজনের নাম পেয়েছেন। এ ছাড়া জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের জনপ্রিয় সব স্লোগান লিখে দেওয়া হবে স্মৃতিস্তম্ভে। ২০ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করে আগামী ৫ আগস্ট সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তারা স্মৃতিস্মম্ভটি উন্মুক্ত করে দিতে চান।
আপনার মতামত লিখুন :