আট বছরেও জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু না হওয়ায় বান্দরবানে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পটি এখন বাতিলের মুখে। জমি চিহ্নিত করা হলেও রাজনৈতিক প্রভাব এবং একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর বিরোধিতায় আটকে আছে প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ।
জানা যায়, ২০১৮ সালে দেশের ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই হিসেবে বান্দরবানেও একটি ইনস্টিটিউট করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। জেলার সুয়ালক ইউনিয়নের মাঝেরপাড়া এলাকায় প্রস্তাবিত পাঁচ একর জমি চিহ্নিত করা হয়। তবে জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর আপত্তিতে প্রকল্পটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে।
আপত্তিকারীদের দাবি, জমির মালিকের একজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ভাই এবং এলাকাটি একটি পাহাড়ি পাড়ার নিকটবর্তী হওয়ায় সহিংসতার শঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, ওই জায়গার পাশে কোনো পাহাড়ি পাড়া নেই। স্থানীয়রা বলছেন, প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো প্রকল্পটি সুলতানপুর এলাকায় সরিয়ে নেওয়া। সেখানে তিন ফসলি জমি আছে এবং নির্মাণ ব্যয়ও অনেক বেশি।
পাহাড়ি-বাঙালি স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে পাহাড়ি বা বাঙলিদের মধ্যে কোনো সমস্যাও নেই। বরং তারা বলছেন, এ এলাকায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হলে তাদের ছেলে-মেয়েরা আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এলাকার উন্নয়ন হবে। যারা বাধা দিচ্ছেন, তারা সবাই বহিরাগত লোকজন। কিছু কুচক্রী মহল ইনস্টিটিউটের জন্য সুলতানপুরে বিকল্প প্রস্তাবিত এলাকা নির্ধারণ করেছে- যা বান্দরবান সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে।
স্থানীয় বাসিন্দা আকাশ মার্মা, ও গড়াঅংসহ অনেকেই দাবি করেছেন, প্রকল্পে বাধা দেওয়ার পেছনে বহিরাগতদের উসকানি ও ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। তাদের আশঙ্কা, প্রকল্প বাতিল হলে বান্দরবানের একমাত্র সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের স্বপ্ন ভেঙে যাবে।
উছামং মার্মা ও নাসির উদ্দিন বলেন, শুরুতে কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু বহিরাগতরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এখন স্থানীয়দের প্রলোভন দেখিয়ে আপত্তি তুলেছে।
সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উক্যনু মারমা বলেন, ‘মাঝেরপাড়ার জায়গাটি নিরাপদ ও যোগাযোগ সুবিধাসম্পন্ন। আপত্তির মূল কারণ রাজনৈতিক।’
জমির মালিক ইদ্রিছ চৌধুরী ও শহীদুল আলম বলেন, তারা এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে জমি দিতে ইচ্ছুক। প্রস্তাবিত এলাকাটি সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংলগ্ন হওয়ায় এটি উপযুক্ত।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কবির হোসাইন বলেন, ‘সুলতানপুর তিন ফসলি এলাকা, সেখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’ জেলা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইনস্টিটিউটটি হলে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে।’
তবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফা সুলতানা বলেন, ‘তদন্তে দেখা গেছে, স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, প্রস্তাবিত স্থানে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করতে পারে।’ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস এম মনজুরুল হক জানান, জমি পরিদর্শনের পর ইতিবাচক মতো দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলেই অধিগ্রহণ শুরু হবে।’