ভালুকার পাড়াগাঁও গ্রামের আব্দুল মোতালেব সৌদি আরবের খেজুর চাষ করে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ২০০১ সালে বাড়ির পাশের মাত্র ৭০ শতাংশ জমিতে সৌদি জাতের খেজুর বীজ বপনের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই চাষাবাদ কয়েক বছরের মধ্যে তাকে কোটি টাকার মালিক করে তুলেছে। বর্তমানে তার চারটি খেজুর বাগান রয়েছে।
গত বুধবার ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ খেজুর বাগান পরিদর্শন করে মোতালেবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সৌদি আরবে খেজুর বাগানে চাকরি করার অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশের মাটিতে একই স্বাদের খেজুর উৎপাদন করে তিনি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এই প্রযুক্তি সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে মিটিংয়ে আলোচনা করে তিনি ভবিষ্যতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এ সময় ময়মনসিংহ জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব মো. আজিম উদ্দিন, ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহামুদ, অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও ভালুকা থানার ওসি হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন।
আব্দুল মোতালেব বাগানের বিভিন্ন জাতের খেজুর পরিচয় করিয়ে দেন। একটি গাছে বড় ও হালকা লাল রঙের ‘আজুয়া’ জাতের খেজুর রয়েছে, যা বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়া ‘আমবাগ’, ‘সুকারী’ জাতের খেজুর বাগানে আছে। পাঁচ বিঘা জমিতে শুরু করা বাগানে বর্তমানে ২ হাজারেরও বেশি গাছ রয়েছে, যার মধ্যে ২৫০টি গাছে এ বছর ফল ধরেছে।
তিনি জানান, প্রথমে ৭৫টি গাছ থেকে মাত্র ৭টি গাছে ফল আসত। ধীরে ধীরে পুরুষ ও মহিলা গাছের বিচি সংগ্রহ করে প্রজনন করার মাধ্যমে ২৪ বছরে দুই হাজারের বেশি ফলদায়ী গাছ গড়ে তুলেছেন। প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক গাছে ৫ থেকে ১০টি কাঁধি (ফলের গুচ্ছ) হয়। ছোট গাছে প্রতি কাঁধিতে ৮-১০ কেজি, বড় গাছে ২০-২৫ কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়।
খেজুরের বাজার মূল্য যথাক্রমে- আজুয়া (বড়): প্রতি কেজি ৪,০০০ টাকা, আজুয়া (ছোট): প্রতি কেজি ২,০০০ টাকা, লিপজল (বড়): প্রতি কেজি ৪,০০০ টাকা, আমবাগ: প্রতি কেজি ২,০০০ টাকা, সুকারী: প্রতি কেজি ১,৫০০ টাকা, বরকি: প্রতি কেজি ১,৫০০ টাকা। তিনি বলেন, তার খেজুর সৌদি আরবের খেজুরের চেয়ে মিষ্টি এবং আকারে বড় হওয়ায় এর চাহিদা অনেক বেশি।
আব্দুল মোতালেব জানান, তিন বছর সৌদি আরবে চাকরি করার সময় তিনি খেজুর চাষের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করেন। ২০০০ সালে দেশে ফেরার সময় সৌদি থেকে খেজুরের বিভিন্ন জাতের বীজ নিয়ে আসেন। প্রথম ৭৫ গাছের মধ্যে দুটো গাছে তিন বছর পর প্রথম ফল আসে। এরপর এলাকাসহ সারাদেশ থেকে আগ্রহীরা তার বাগান পরিদর্শনে আসেন।
বাগানের পরিচর্যা, পানির ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার জন্য তিনি লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করেছেন। বাগানের চারা বিক্রির মাধ্যমে সংসারের যাবতীয় চাহিদা পূরণ করছেন। ছোট চারা প্রতি ৫০০-১,০০০ টাকা, ফলদায়ী গাছ বিক্রি সর্বোচ্চ এক লাখ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগের কাছ থেকে কোনো পরামর্শ বা সহযোগিতা পাননি। তবে সরকার সহযোগিতা করলে বাগানটি আরও বিস্তৃত এবং উৎপাদনমুখী করে দেশের কৃষিতে সৌদি খেজুরের চাষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশাবাদী। তার মতে, বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া সৌদি জাতের খেজুর চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
আব্দুল মোতালেব বলেন, তার সফলতার পেছনে স্ত্রীর অবদান অনেক বড়। স্ত্রী মজিদা আক্তার সব সময় পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন। বড় ছেলে মোফাজ্জল বর্তমানে প্রবাসে রয়েছেন, আর ছোট ছেলে মিজান দেশীয় খেজুর জাতের সঙ্গে বিদেশি জাতের ক্রস করে আরও উন্নত জাতের গাছ তৈরি করেছেন।