ঢাকা সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫

বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিস্তীর্ণ জলাধার শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ঝুঁঁকি

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২৫, ০৭:৫২ এএম

যেখানে শিশুদের খেলাধুলায় কোলাহল থাকার কথা, সেই স্কুলমাঠ আজ যেন বিস্তীর্ণ জলাধার। চলতি বর্ষা মৌসুমে টানা বৃষ্টির কারণে ডুবে গেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় ১৩৪ নম্বর মগটুলা তরপপাছাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ। বৃষ্টি হওয়ায় বিদ্যালয়সংলগ্ন জলাশয়ের পানি বেড়ে গিয়ে মাঠে ঢুকে পড়েছে। এতে স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসে যাতায়াত ও স্কুল প্রাঙ্গণে চলাচল চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষগুলোতে চলছে পাঠদান, তবে মাঠের এমন চিত্রে শিক্ষার্থীরা যেন বন্দি জীবনযাপন করছে।

এদিকে বিদ্যালয় চত্বরে পানি জমে থাকার কারণে শিক্ষার পরিবেশ যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি ঝুঁকির মধ্যেও রয়েছে, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। অনেক অভিভাবক ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতেও ভয় পাচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে নেই কোনো প্রাচীর। দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এবং মানসিক বিকাশেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন অভিভাবকরা।

গতকাল রোববার সরেজমিন দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে স্কুল মাঠসহ স্কুলে প্রবেশের রাস্তাটি পানিতে তলিয়ে গিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা হাঁটুপানি ভেঙে স্কুলে প্রবেশ করছে। এ কারণে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে মোট ১৩৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। পানির কারণে অনেক শিশু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসছে না। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৪৭। এ ছাড়া বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক ৬ জন, উপস্থিত ৪ জন। প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকও অসুস্থতাজনিত কারণে এক মাসের ছুটিতে আছেন।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. হাছিবুল বলেছে, সামান্য বৃষ্টি হলেই আমাদের স্কুল মাঠে হাঁটু সমান পানি হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গত বৃহস্পতিবার স্কুলে ঢোকার সময় পা পিছলে পানিতে পড়ে যাই। তাতে আমার বই-খাতা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংকট হওয়ায় ঠিকমতো ক্লাস হয় না। বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফি বলেন, প্রতিদিনই হাঁটপানি মাড়িয়ে স্কুলে আসতে হয়। তা ছাড়া স্কুল মাঠে পানি থাকায় আমরা কোনো খেলাধুলা করতে পারি না।

শিক্ষার্থী হাছিবুলের বাবা জামাল উদ্দিন জানান, আমার ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়ে আমাকে সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়, কখন যে পানিতে পড়ে যায় কে জানে। আমার মতো অনেকেই এই চিন্তায় থাকেন। আমরা অভিভাবকরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত মাঠ ভরাট করার দাবি জানাচ্ছি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবুবকর সিদ্দিক জানান, পানির কারণে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে আসছে না। স্কুলের প্রবেশপথে ঢুকলে এবং বের হলেই পানিতে নামতে হয়। অনেক বাচ্চা পা পিছলে বই-খাতা নিয়ে পানিতে পড়ে গিয়েছে। যার কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। জলাবদ্ধতা নিরশনের বিষয়ে পূর্বের শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আহমেদ জানান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিষয়টি আমাকে অবগত করেননি। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। দ্রুতই পরিদর্শনে যাব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।