- নির্গত হচ্ছে কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাস
- দুর্গন্ধ ও কালি গড়িয়ে পড়ছে এলাকায়
- মানুষের মধ্যে দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ
- বিষাক্ত ধোঁয়া-কালিকে গাছ, ফুল-ফল ও মাছের ক্ষতি হচ্ছে
- মারাত্মক হুমকিতে এলাকার পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে টায়ার পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে জ্বালানি তেল ও কালি। ফসলি জমিতে গড়ে তোলা ওই কারখানার কালো ধোঁয়া, উৎকট দুর্গন্ধ ও বিষাক্ত গ্যাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের এলাকায়। এতে মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য। এ ছাড়া স্থানীয় লোকজনের মধ্যে দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ। উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নের বাকাই এলাকায় ওই কারখানার অবস্থান।
সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা যানবাহনের পুরোনো টায়ার স্তূপ করে রাখা হয়েছে। তা পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে এক ধরনের জ্বালানি তেল। কিন্তু এর বিষাক্ত গ্যাস ও উৎকট গন্ধে বিপর্যস্ত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। বাতাসের সঙ্গে বিষাক্ত ধোঁয়া আর কালি মিশে ফসলি জমির ফসল, গাছে গাছে পরত পড়ছে। আবার পুকুরের পানি দূষিত হয়ে মরে যাচ্ছে মাছ। সেই সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে নানা প্রজাতির গাছের ফুল ও ফল।
স্থানীয়রা জানান, কারখানাটিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের পুরোনো টায়ার আগুনের তাপে গলিয়ে তৈরি করা হয় জ্বালানি তেল এবং কালি। এর পাশাপাশি পোড়ানো টায়ারের ভেতর থেকে বের করা হয় লোহা তৈরির কাঁচামালও।
তাদের অভিযোগ, কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া, গ্যাস ও কালি বাতাসের সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে পড়ছে ধানের পাতায়, গাছ ও পুকুরে। এতে একদিকে পুকুরের পানি দূষিত হয়ে মরে যাচ্ছে সব মাছ। অন্যদিকে গাছের ফুল ও ফল নষ্ট হয়ে ঝরে পড়ছে। এ ছাড়া স্থানীয় লোকজনের মধ্যে দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ। পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত প্রশাসনের কাছে এমন কারখানা বন্ধের দাবি জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় কৃষক সোবহান আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাস্তার অবস্থাও ভয়াবহ, মানুষ ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না। পুকুরে ডিম দিয়েছিলাম রেণু করার জন্য, সব মরে গেছে। এর আগে এলাকাবাসীর কঠোর ভূমিকায় বন্ধ ছিল কারখানাটি। কিছুদিন পরেই আবার তা চালু হয়।
সুরেশ চন্দ্র মাহাতো নামে আরেক কৃষক বলেন, মাঠে কাজ করতে গেলেই দুর্গন্ধে মনে হয় বমি হয়ে যাবে। বিষাক্ত বর্জ্যরে দুর্গন্ধ আর গ্যাসে শ্রমিকরা মাঠে কাজ করতে চায় না। বাধ্য হয়ে জমি কম দামে বর্গা দিতে হচ্ছে। পানিতে নামলে চর্মরোগ হচ্ছে। ধানের ফলন ভালো হচ্ছে না।
স্থানীয় যুবক পলাশ ঘোষ বলেন, টায়ার পোড়ানোর কালো ধোঁয়া ও গন্ধে শ্বাসকষ্টে ভুগছি আমরা। এসব টায়ার পোড়ানোয় বিষাক্ত ধোঁয়া ও দুর্গন্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আমাদের এলাকার পরিবেশ। এসব কারখানাগুলো জনবসতি এলাকায় চলতে পারে না। আমাদের এলাকা থেকে দ্রুত কারখানা অপসারণের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
কোম্পানিটির ম্যানেজার স্বপন শেখ বলেন, পুরোনো টায়ার পুড়িয়ে ফার্নেস অয়েল ও কালি তৈরি করা হয়। যা বিভিন্ন ফায়ারিং কাজে ব্যবহার হয়। কালি ইটভাটায় বিক্রি করি। অনুমোদনসংক্রান্ত কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে স্যারের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ূন কবির বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. তুহিন আলম জানান, এ ধরনের কোনো কোম্পানিকে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। তবে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।