রাজশাহীতে অতিবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কৃষিতে। আমন ধান ও শাক-সবজির আবাদ তলিয়ে যাওয়ায় উৎপাদনে ধস নেমেছে। ফলে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে দাম বেড়ে গেছে কেজিপ্রতি ২০-৫০ টাকা। এতে সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, রাজশাহী বিভাগে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ছাড়াবে।
জানা যায়, বিভাগের ৮ জেলায় প্রায় ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির আমন ধানের চারা ও বিভিন্ন শাক-সবজির খেত নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, তানোর, দুর্গাপুর, বাগমারা ও বাঘা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধিতে চরাঞ্চলের ফসলের ক্ষতিও মারাত্মক। কৃষকরা জানান, জমির পানি নেমে গেলে আবার চাষাবাদ করতে হবে। কিন্তু নতুন করে চারা ও বীজ জোগাড় করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
রাজশাহী নগরের মাস্টারপাড়া ও খড়খড়ি বাইপাস কাঁচাবাজারে ঘুরে দেখা গেছে, কম সরবরাহের অজুহাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সবজির দাম বেশি ধরছেন। মোকাম ও আড়তে প্রতিদিন বাড়ানো হচ্ছে সবজির দাম। খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। বিক্রেতাদের দাবি, বৃষ্টি ও বন্যায় অনেক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের ধারণা, বৃষ্টি কমে গেলে ও বন্যার পানি নেমে গেলে বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে এবং দামও কমতে পারে। ১ মাস দাম এমন উচ্চ অবস্থায় থাকতে পারে। সপ্তাহ দুয়েকের ব্যবধানে সবজির দাম কেজি প্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। গত ১৫ দিনের মধ্যে কাঁচামরিচের দাম কেজিতে ১৫০ থেকে বেড়ে ২৫০ টাকা, পটোল ৫০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে বেড়ে ১০০ টাকা, করলা ৬০ থেকে বেড়ে ৮০ টাকা, দেশি লাউ ৫০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে। তবে ফুলকপির দাম আগের মতোই কেজিপ্রতি ১০০ টাকা। কমেছে শুধু পেঁপের দাম; ৫ টাকা কমে এখন ৩০ টাকা কেজি। আলুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে, কেজি ২০-২৫ টাকা। তবে পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা।
অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা সবজি কিনতে দ্বিধা করছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, ‘আগে ২০ টাকায় লাউ কিনতাম, এখন দিতে হচ্ছে ৫০ টাকা। তাই সবজি কম কিনছি, আলু বেশি কিনছি।’
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক সাইফুল ইসলাম হীরক জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে শাক-সবজির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান বলেন, অতিবৃষ্টি ও নদীর পানি বাড়ার কারণে ফসলের ভালো ক্ষতি হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সেখানে আউশ আমন ধান লাগানো হয়েছিল, যা পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় নিম্নাঞ্চলে পানি উঠে সবজির ক্ষতি হয়েছে। এখন পানি নামতে শুরু করেছে। আমরা কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন