ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

সেতুর অভাবে দুর্ভোগ ৩ লাখ মানুষের

সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০৯:১৫ এএম
দুর্ভোগ

ফরিদপুরের সালথা ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বল্লভদী ইউনিয়নের কামারদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন কুমার নদের ওপর সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন দুই উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ। ফলে স্থানীয়রা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে চরম সমস্যায় পড়ছেন। শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বর্ষা মৌসুমে নৌকা নিয়ে পারাপারের সময় দুর্ঘটনার পাশাপাশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় আর শুষ্ক মৌসুমে বাসের সাঁকো পারাপারেও ঘটে দুর্ঘটনা। মুমূর্ষু রোগী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এখানে বড় চ্যালেঞ্জ, থাকে মৃত্যুর ঝুঁকিও। সেতুটি নির্মাণ হলে দুই উপজেলার সহজ যোগাযোগব্যবস্থার পাশাপাশি উন্নয়নও ঘটবে এ অঞ্চলে কৃষিকাজ ও ব্যবসা বাণিজ্যের। বদলে যাবে মানুষের জীবন যাত্রার মান।

ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা-সালথা উপজেলার মাঝে বল্লভদী ইউনিয়নের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কুমার নদ। কুমার নদের ওপর একটি সেতু না থাকায় ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার উপজেলার সীমানাঘেঁষা এলাকার মানুষের চলাচলের শেষ ভরসা শুধুই বর্ষাকালে নৌকা ও শুষ্ক মৌসুমি বাসের সাঁকো। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হয় স্থানীয়দের। বর্ষা মৌসুমে দুর্ঘটনার পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ দুই উপজেলার ৩ লাখের বেশি মানুষকে। পরিবহন সমস্যার কারণে এসব এলাকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য নদী পাড়ি দিয়ে শহরে বিক্রিতে ঝামেলায় পড়তে হয়। এতে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে স্থানীয় কৃষক। এ নৌঘাটে স্থানীয়দের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা নদী পাড়ি দিতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা শিকার হন। ভয়ে অনেক অভিভাবকই সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে চান না। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় রোগীদের। কেউ অসুস্থ  হয়ে পড়লে নদী পাড়ি দিয়ে শহরে নিয়ে চিকিৎসা করানো কষ্টসাধ্য। বিশেষ করে মুমূর্ষু  রোগী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই এখানে বড় সমস্যা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেতু না থাকায় সরাসরি যোগাযোগব্যবস্থার অভাবে ছেলেমেয়েদের ভালো ঘরে বিয়ে হয় না বলে জানান স্থানীয়রা।

এলাকাবাসীর দাবি, নদীর ওপর কামারদিয়া খেয়া ঘাটে কোন ব্রিজ না থাকায় বর্ষায় ভরসা নৌকা আর খরা মৌসুমে ব্যবহার করতে হয় না বলে বাসের সাঁকো। এখানে একটি ব্রিজ নির্মিত হলে বদলে যাবে অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা। উন্নত হবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাত। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের যাতায়াতে আসবে স্বস্তি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর পার হতে হবে না কুমার নদ।

কামারদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র মো. রবিউল ইসলাম জানায়, তাদের মতো অন্য এলাকা থেকে কয়েকশ ছাত্রছাত্রী প্রতিদিন বর্ষাকালে খেয়া নৌকা পাড়ি দিয়ে স্কুলে পড়ালেখা করতে যায়। সময়মতো খেয়া ধরতে না পারলে ঘাটে রোদ বৃষ্টির মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। আবহাওয়া খারাপ হলে স্কুলে যাওয়া হয় না। এতে তাদের স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যাহত হয়।

খেয়া ঘাটের মাঝি জমির মিয়া জানান, ঝড়-বৃষ্টি ছাড়াও সামান্য বাতাসের নৌকা পারাপার বন্ধ থাকে। এ ছাড়া ঘন কচুরিপানার কারণে চলাচলের পথ বন্ধ হয়েও মাঝেমধ্যে পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। এখন প্রায় সব জায়গাই ব্রিজ হয়ে গেছে। শুধু এখানেই হলো না। এখানে ব্রিজ হলে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগ থেকে বেঁচে যেত।

বল্লভদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুর রহমান শাহিন বলেন, সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের কামারদিয়া নামক স্থানে সালথা ও মুকসুদপুর উপজেলার বাসিন্দাদের চলাচলের জন্য দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছে এলাকাবাসী। এখানে ব্রিজ নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অথচ কম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে পাশের এলাকায়। 

সালথা উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাফর মিয়া বলেন, ‘ওই স্থানে আইডি ভুক্ত রাস্তা নেই, তারপরও আমি আমার সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে পাঠাব, দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’