পশ্চিম এশিয়ার ভূরাজনীতিতে ইরান ও সৌদি আরব দশকের পর দশক ধরে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসেবে পরিচিত। তবে ২০২৩ সালের মার্চে চীনের মধ্যস্থতায় রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক চুক্তির পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এক নতুন মোড়ে পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ইরান সংঘাতেও এই নতুন সম্পর্কের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা আঞ্চলিক ভারসাম্য ও মুসলিম বিশ্বের ঐক্যে নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই রূপান্তরের পেছনে রয়েছে ইতিহাস, ভূরাজনীতি, আন্তর্জাতিক চাপ ও সর্বশেষ ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে উভয় দেশের অভিন্ন অবস্থান। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা ঠেকাতে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যের ডাক দিয়েছে ইরান ও সৌদি আরব। জেদ্দায় মুসলিম দেশগুলোর সহযোগিতা সংস্থা ওআইসি আলোচনার আগে পার্শ্ববৈঠকে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বললেন, মুসলিম বিশ্বকে এগোতে হবে একসঙ্গে। সৌদি আরবের জেদ্দায় ওআইসির জরুরি বৈঠকের আলোচনার ফাঁকে সাক্ষাৎ করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ও সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান।
এ সময় তারা বলেন, গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধে মুসলিম দেশগুলোকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। গাজায় নিশ্চিত করতে হবে মানবিক সহায়তা। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ফিলিস্তিনি ভূখ-ে সম্প্রসারণের জন্য ইসরায়েলের ‘বিপজ্জনক প্রকল্প’ রুখতে মুসলিম বিশ্বের ঐক্য অত্যন্ত জরুরি। এ ছাড়া ইরান-সৌদি সম্পর্কের উন্নয়ন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার নিয়েও আলোচনা হয়। কূটনৈতিক মহল বলছে, দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি একসঙ্গে এগোলে পশ্চিম এশিয়ায় নতুন স্থিতি তৈরি হতে পারে, যা সংলাপ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও অনধিকার হস্তক্ষেপ না করার নীতির ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৬২ হাজার ফিলিস্তিনি। যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
নতুন করে গাজা সিটিতে দখল অভিযান শুরুর পর মানবিক বিপর্যয় আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পার্শ্ববৈঠকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ও সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান বলেন, ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হলে মুসলিম দেশগুলোকে একসাথে এগোতে হবে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনি ভূখ- দখলে নিতে ইসরায়েল যে ‘বিপজ্জনক প্রকল্প’ চালাচ্ছে, তা রুখতে মুসলিম বিশ্বের ঐক্য অত্যন্ত জরুরি। বৈঠকে ইরান-সৌদি সম্পর্ক উন্নয়ন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়েও আলোচনা হয়।
ইরান-সৌদি দ্বন্দ্বের মূল শিকড় নিহিত রয়েছে ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও কৌশলগত প্রতিযোগিতায়। ইরান একটি শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলামি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যেখানে সৌদি আরব একটি সুন্নি ওয়াহাবি রাজতন্ত্র। যদিও ইরানে ইসলামি বিপ্লবের আগে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব ছিল না বললেই চলে। মোহাম্মদ রেজা শাহর সময় ইরান-সৌদি সম্পর্ক ছিল সহযোগিতাপূর্ণ, কৌশলগত; কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক। তেল, নিরাপত্তা ও যুক্তরাষ্ট্রঘেঁষা পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা করে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন