সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২৫, ১০:৫৭ এএম

বেনাপোল চেকপোস্টে ভিড় জমাচ্ছেন কর্মহীন নারীরা

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২৫, ১০:৫৭ এএম

বেনাপোল

বেনাপোল

নদীভাঙন, খরা, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অসহায়, বাল্যবিবাহ, যৌতুকের শিকার, স্বামী পরিত্যক্তা কর্মহীন নারীরা ভিড় জমাচ্ছেন সীমান্ত শহর বেনাপোল চেকপোস্টে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দূরদূরান্ত থেকে আসা এসব নারী চোখে পড়ে। তারা পরিবার পরিজনের দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাতে চেকপোস্ট এলাকায় ভিড় জমান। এখানে ভারত থেকে আসা পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছে থেকে তারা কিছু পণ্য ক্রয় করে বেনাপোল বাজার, যশোর, খুলনাসহ অন্যান্য জায়গায় বিক্রি করে সংসার চালান।

খুলনা থেকে বেনাপোলগামী কমিউটার ট্রেনে তারা প্রতিদিন সকালে আসেন বেনাপোল রেলস্টেশনে। সেখান থেকে ইজিবাইক, ভ্যান-রিকশায় দলবদ্ধভাবে চলে আসেন চেকপোস্ট এলাকায়। এসব মহিলার হাতে থাকে বড় বড় ব্যাগ ও বস্তা। তাদের মধ্যে অনেকে স্বামী নেশাগ্রস্ত ও বিধবার পাশাপাশি উঠতি যুবতীরাও রয়েছেন। জীবিকা নির্বাহ ও সংসার চালানোর একমাত্র উৎস ভারতীয় মালামাল চেকপোস্ট এলাকা থেকে কিনে যশোর-খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা। অনেক নারী বলেন, এ ব্যবসা থেকে ফিরে আসাও কঠিন হয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে তল্লাশির পরও সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করে পেটের দায়ে এ ব্যবসা করছি। চেকপোস্টে আসা নারীদের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা কহিনুর বেগম বলেন, ‘আমি আমার গ্রাম থেকে চলে এসেছি, নদীভাঙনের জন্য। আমাদের ভিটেমাটি কিছু নেই। স্বামী নেই। দুই মেয়েকে নিয়ে কাজের সন্ধানে বেনাপোল এসে একটি ঘর ভাড়া করি। এরপর কাজ না পেয়ে পাশের একজন মহিলার সহযোগিতায় চেকপোস্ট এসে ভারত থেকে আসা বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করে যেখানে যে রকম সুযোগ হয় তাই বিক্রি করে, যা রোজগার হয় তাই নিয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে চলি।’

ঝিনাইদহ থেকে আসা রহিমা জানান, তার স্বামী আরও একটি বিয়ে করার পর তাকে দেখে না। এরপর সে বেনাপোল এসে ঘর ভাড়া করে চেকপোস্ট এলাকায় পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে কম্বল, প্রসাধনীসামগ্রী, খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে।

নড়াইল থেকে আসা সালেহা বেগম জানান, তার স্বামী তাকে ছেড়ে দিয়েছে। এরপর মা-বাবার সংসার খুব অভাব-অনটনের মধ্যে চলে। বাধ্য হয়ে তার নাবালক এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বেনাপোল পাড়ি জমান। এরপর ভালো কোনো কাজ না পেয়ে অন্য আরও ১০ জন নারীর মতো সে এখানে জীবিকা নির্বাহের জন্য ভারত থেকে আসা বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করেন, যা উপার্জন করে তা দিয়ে সংসার চালান বলে জানান।

খুলনা, দৌলতপুর, নোয়াপাড়া থেকে আসা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন তরুণী বলেন, খুলনা থেকে আয়ের উৎস হিসাবে বেনাপোলে প্রতিদিন সকালে ট্রেনযোগে আসি এবং এখান থেকে কম্বলসহ কিছু খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করে দুপুরে বা বিকেলে ট্রেনে করে খুলনায় নিয়ে বিক্রি করে সংসার চালাই। সব থেকে বড় সমস্যা হলো এসব পণ্য ক্রয় করে ট্রেনে বা বাসে খুলনা যেতে গেলে পদে পদে তল্লাশি করে। মাঝেমধ্যে বিজিবির চেকে অনেক মালামাল নিয়েও যায়। আবার অনেক সময় অনুরোধ করার পরও কিছু বিজিবি দয়া মায়ার খাতিরে ছেড়েও দেয়। এভাবে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করছি।

প্রতিদিন বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে এমন করে নারীরা দাঁড়িয়ে থাকলে দেশের সম্মানও নষ্ট হয়। কারণ, এটা রাষ্ট্রের প্রধান ফটক। এ পথে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি পর্যটক ভারত বাংলাদেশ আসা-যাওয়া করে। আর সেই প্রবেশমুখে দারিদ্র্যতার ছাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অসহায় কয়েকশ নারী। ভারতীয় কিছু লোক বৈধ পাসপোর্টের মাধ্যমে কিছু ভারতীয় পণ্য এ দেশে এনে এসব মহিলাদের কাছে ও চেকপোস্টের কিছু দোকানে বিক্রি করে চলে যায়। এসব মালামাল মহিলারা কিনে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। চেকপোস্ট থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত আসার সময় বিভিন্ন স্থানে এমনকি রেলের বগির মধ্যে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তল্লাশিতে টানাহেঁচড়া চলে। অনেকে কান্নাকাটি করে হাত-পা জড়িয়ে ধরে আনিত মালামাল বাঁচানোর চেষ্টা করে থাকতে দেখা যায়।

এলাকার সচেতন মহল বলেন, এসব অসহায় নারীদের জন্য কর্মসংস্থান সরকারিভাবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। না হলে তাদের মানবতার জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ রয়েছে অনিশ্চয়তার মধ্যে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি মানবিক হলেও আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দায়বদ্ধতা আছে। বাধ্য হয়ে কড়াকড়ি করতে হয়। এসব নারী কোনো নিষেধ মানে না। এটা একটি আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট। দেশের ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুণœ না হয়, সে দিকেও লক্ষ রাখতে হয়। তবে চেকপোস্ট এলাকায় চোরাচালান প্রতিরোধে আমরা সবসময় সতর্ক।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!