ডাকঘর ভবনের দেয়ালে ধরেছে ফাটল, খসে পড়েছে ছাদের বিভিন্ন জায়গার পলেস্তারা, ছাদের ওপরে জমেছে শেওলার স্তর আর দেয়ালের বাইরে জন্মেছে বিভিন্ন ঘাস ও আগাছা। যেন বহু বছরের পুরোনো জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত ভবন। অথচ এ জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে ডাকঘরের সেবা কার্যক্রম। বর্তমানে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার প্রধান ডাকঘরের চিত্র এমনই।
ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে কখনো মাথার ওপর কখনো বা যন্ত্রপাতির ওপর। বেশির ভাগ জায়গার পলেস্তারা খুলে বের হয়েছে রড। একটু বৃষ্টি হলেই ভবনের ছাদ ও দেয়াল চুইয়ে পানি পড়ে মেঝেতে। ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে খসে পড়া পলেস্তারা, ফাটল ধরা স্যাঁতসেঁতে দেয়াল ও ছাদের ভৌতিক দৃশ্য। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে বাধ্য হয়ে পোস্ট মাস্টার নিজের কক্ষ ছেড়ে বাইরে একটি টেবিলে বসে কর্মচারীদের সঙ্গে তার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। চার দশক আগে ভবনটি নির্মিত হলেও দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার কিংবা মেরামত না করায় বর্তমানে ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
পোস্ট মাস্টারসহ কর্মচারীরা প্রতিনিয়ত ভয় ও মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। পোস্ট অফিসে আসা সেবাগ্রহিতারা সব সময় ছাদের দিকে চেয়ে থাকেন। না জানি কখন পলেস্তারা খসে পড়ে। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের চিঠিপত্র আদান-প্রদান, চাকরির আবেদনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবা গ্রহণে ডাকঘরে যেতে হয় জনসাধারণকে।
ডাকঘরে সেবা নিতে আসা শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এখানে প্রতিনিয়ত আসতে হয় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের চিঠি পত্র পাঠানোর জন্য। এই যে জরাজীর্ণ ভবন আমরা দেখতে পাচ্ছি, এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। দুর্ঘটনা কিন্তু প্রতিদিন হয় না, দুর্ঘটনা এক দিন হবে আর সারা জীবন এটা বয়ে বেড়াতে হবে। তাই ভবনটি সংস্কার অথবা নতুন ভবন নির্মাণ করা জরুরি।’
সেবা নিতে আসা রেজাউল করিম বলেন, ‘এখানে আমাদের বিভিন্ন খাতা চিঠিপত্র আসে। পোস্ট অফিসের অবস্থা খুবই খারাপ, ফাটল ধরেছে কখন কি যে ঘটে? পোস্ট অফিসে ঢোকা আমাদের জন্য নিরাপদ নয়।’
আরেক সেবাগ্রহীতা জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি পোস্ট অফিসের একজন নিয়মিত গ্রাহক। আমার ভেতরে ঢুকতে প্রচ- ভয় লাগে কারণ দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল। পোস্ট অফিসটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।’
ডাকঘরের ভারপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টার সুনীল চন্দ্র প্রামানিক বলেন, ‘বর্তমানে আমার অফিসের অবস্থা খুবই শোচনীয়। যার প্রেক্ষিতে জনগণ সেবা নিতে এখানে আসতে ভয় করে এবং আমিও ভয়ের কারণে ঘরের ভেতর থেকে বাইরে এসে কাজ করতেছি। ভবনটি ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। যেটি এখন ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।’
এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলার পোস্ট অফিস পরিদর্শক জাহানুর ইসলাম বলেন, কালাই উপজেলা পোস্ট অফিসের ভবনটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে জানানো হয়েছে। অচিরেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।