- কেজিপ্রতি সুপারির দাম বেড়েছে প্রায় ৫০০ টাকা
- উৎপাদন তিন বছরে ২০ হাজার টন থেকে নেমে ৭ হাজার টনে এসেছে
- আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি
- বাজারে তৃতীয় পক্ষের প্রভাব
সিলেটে সুপারির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ক্রেতারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। গত কয়েক মাসে প্রতি কেজি সুপারির দাম প্রায় ৫০০ টাকা বেড়েছে। এ মূল্যবৃদ্ধি দীর্ঘদিন ধরে চললেও বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা এর পেছনে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হ্রাসকে প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করছেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি করা সুপারির ওপর শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে বিদেশ থেকে আসা সুপারির দাম অনেক বেড়ে গেছে। সিলেটের ব্যবসায়ীরা সরাসরি সুপারি আমদানি করেন না, বরং চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেনেন। এই ‘তৃতীয় পক্ষের’ মাধ্যমে সুপারি আসায় দাম আরও বেড়ে যায়। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের বেশি দামে সুপারি কিনতে হচ্ছে। আগে দাম কিছুটা বাড়লেও তা দ্রুত কমে আসত, কিন্তু এবার দাম কেবল বেড়েই চলেছে।
আমদানি নির্ভরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় সুপারির উৎপাদনও আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, ঘন ঘন বজ্রপাত এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক সুপারি গাছ নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া সুপারি একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল। ফলন পেতে ১২ থেকে ১৪ বছর সময় লাগে। এই দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে কৃষকেরা সুপারি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
নগরীর বঙ্গময়ী বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী রহমান আলী বলেন, এই বাজারে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এ ব্যবসা করছি। মাঝেমধ্যে দাম বাড়লেও তা দীর্ঘস্থায়ী হতো না। কিন্তু এবার তো বাজার পুরোপুরি উল্টে গেছে। কর বাড়ানোর পর থেকে দাম আর কমছেই না। বরং দিন দিন আরও বাড়ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে সিলেটে যেখানে ২০ হাজার ৬৫৭ টন সুপারি উৎপাদিত হয়েছিল, সেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে মাত্র ৭ হাজার ৫৩৪ টনে নেমে এসেছে। এতে স্থানীয় চাহিদা মেটাতে আমদানি করা সুপারির ওপর নির্ভরতা বেড়েছে।
এদিকে সিলেট নগরীর কাজিরবাজার এলাকার সুপারির পাইকারি দোকানগুলোয় দেখা যায়, দেশীয় সুপারি এখন প্রায় অদৃশ্য। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত সুপারি বাজারে আধিপত্য করছে। কাজিরবাজারের মতো পাইকারি বাজারগুলোয় বর্তমানে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা সুপারিই বেশি বিক্রি হয়। আমদানি করা থাই সুপারি প্রতি কেজি ৭৫০-৮৫০ টাকা, সিঙ্গাপুরের সুপারি ৭০০-৯০০ এবং ইন্দোনেশিয়ান সুপারি ৬৫০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে সব ধরনের সুপারি প্রতি কেজি ৯৫০-১ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, দাম বাড়ার বিষয়ে তাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি, তবে শিগগিরই তারা বাজার পরিদর্শন করবেন।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ জানান, ‘সুপারি একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল। ফলন পেতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৪ বছর। ফলে কৃষকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন, আর উৎপাদন দিন দিন কমছে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন