ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় আদা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নামমাত্র শ্রম আর স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভবান হওয়ায় উচ্চমূল্যের মসলা জাতীয় ফসল আদা চাষে বস্তা পদ্ধতিতে ঝুঁকছেন কৃষকরা। খোলা জায়গা, পতিত জমি, ছাদে, বাড়ির আঙিনায় এ চাষ করছেন। তাদের সফলতা দেখে অনেকেই এ চাষে ঝুঁকছেন। আদা ভেষজ ঔষধিগুণে ভরপুর ও মসলাজাতীয় একটি ফসল। রন্ধনশালায় নানা খাবারে স্বাদ বাড়াতে এর যেন জুড়ি নেই। ওষুুধশিল্পে কাঁচামাল হিসেবে এবং ভোক্তার কাছে আদার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৮ হেক্টর জমিতে বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। গত বছরের চাইতে এবার ৪ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে। বস্তায় আদা চাষ করা খুবই সহজ একটি পদ্ধতি। এ চাষের জন্য আলাদা করে জমির প্রয়োজন পড়ে না। এ চাষে খরচ এবং রোগবালাই কম হয়। তা ছাড়া প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
জানা যায়, এ পদ্ধতিতে প্রথমে বস্তায় পরিমাণ মতো জৈব ও রাসায়নিক সার এবং বেলে দোআঁশ মাটি দিতে হয়। এর সঙ্গে দানাদার কীটনাশক মিশিয়ে দিতে হয়। একেকটি বস্তায় ১৫-২০ কেজি মাটি দিয়ে বীজ আদা রোপণ করতে হয়। একেকটি বস্তায় তিনটি চারা রোপণ করা হয়। বস্তায় প্রতি খরচ হয় ৩০-৩৫ টাকার মতো। ফলন ভালো হলে প্রতি বস্তায় দেড় কেজির মতো আদা পাওয়া যায়। প্রতি কেজি আদা ২০০ ও খুচরা ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
সরেজমিনে পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বাড়ির আঙিনায়, ছাদে, পতিত জমি, খোলা জায়গাতে সারি সারি বস্তায় লাগানো আছে আদা। আদা গাছগুলোও বেশ সুন্দর আর সতেজতা হয়ে উঠেছে। পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা।
মোগড়া এলাকার গৃহিণী তাসলিমা বেগম বলেন, গত বছর শখের বশে বাড়ির আঙিনায় ৭টি বস্তায় আদা রোপণ করে ভালো ফলন পেয়েছি। কৃষি অফিসের সহায়তায় এ মৌসুমে সাড়ে ১৫ শতাংশ জমিতে ১০০০ বস্তায় আদা চাষ করি। এরমধ্যে আমার ৫০০ বস্তা, বাকি ৫০০ বস্তা কৃষি অফিস দিয়েছে। পেয়েছি সার ওষুধসহ অন্যান্য উপকরণ। এ চাষে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাক। বর্তমানে বাগানের অবস্থা খুবই ভালো। বস্তায় আদা গাছের যে ফলন দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হয় প্রতি গাছে কমপক্ষে ১ কেজির ওপর ফলন পাব। স্থানীয় বাজারে আদার যে দাম আশা করছি ২ লাখ টাকার ওপর বিক্রি করতে পারব।
ইব্রাহিম ভূঁইয়া লিটন বলেন, কৃষি অফিসের সহায়তায় গত দুই বছর ধরে আদা চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছি। এ মৌসুমে বাড়ির আঙিনায় প্রায় ৪০০টি বস্তায় আদা চাষ করি। কৃষি অফিস সার, বীজ, বস্তাসহ অন্যান্য উপকরণ দিয়েছে। যদি বাজার দর ভালো পাওয়া যায় তাহলে গত বছরের চাইতে এবার বেশি লাভবান হব। তিনি বলেন- আদা চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম, লাভ বেশি হয়। সামনে বড় করে আদা চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, বস্তায় আদা চাষে কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছেন। এ চাষে আলাদা জমির দরকার নেই। আবার অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার ভয়ও নেই। বস্তায় চারা রোপণের পর ৮ মাসের মাথায় ফলন পাওয়া যায়। এ চাষ করতে কৃষককে বস্তা সার, ওষুধসহ অন্যান্য উপকরণ দেওয়া হয়েছে। ফলন ভালো রাখতে মাঠ কর্মীরা প্রতিনিয়ত বাগান পরিদর্শন করছে।