ঢাকা সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আলুই এখন চাষিদের দুঃস্বপ্ন

রেজাউল করিম, রংপুর
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫, ০১:৫৯ এএম
  • ২২ টাকার সরকারি দরে আলু কৃষকের হাতে থাকে মাত্র ৫ টাকা
  • কৃষকেরা বলছেন, লোকসান চলতে থাকলে আলু চাষ ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন
  • হিমায়িত আলুতে লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

উত্তরাঞ্চলের আলুচাষিরা ভয়াবহ লোকসানের মুখে পড়েছেন। সরকারি দর কেজিপ্রতি ২২ টাকা নির্ধারণ হলেও হিমাগারের খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের হাতে আসছে মাত্র ৫ টাকা। উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ১৮-৩০ টাকা হলেও বাজারে মিলছে ১০-১২ টাকার বেশি নয়। এতে হতাশ ও দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।

কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে শুধু রংপুর জেলায় ৬৬ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে প্রায় ২০ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু জেলায় হিমাগার রয়েছে মাত্র ৪০টি, যার ধারণক্ষমতা ৪ লাখ ৬০ হাজার টন। উৎপাদনের চার ভাগের এক ভাগ সংরক্ষণ সম্ভব হওয়ায় বাকি আলু বাজারেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকেরা।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, হিমাগারে মজুত থাকা ৪ লাখ ৬১ হাজার ৭৪৭ টনের মধ্যে এ পর্যন্ত বের হয়েছে মাত্র ১ লাখ ১ হাজার ৫৯৪ টন। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নতুন মৌসুমের আলু চাষ শুরু হবে এবং ৬০ দিনের মধ্যে নতুন আলু বাজারে আসবে। ফলে হিমাগারে বিপুল পরিমাণ আলু আটকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রংপুর বিভাগের আট জেলায় এবার ২ লাখ ২৫ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার ৯৯২ টন। কিন্তু ১১৬টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে মাত্র ১১ লাখ ৯ হাজার ৬৯২ টন। শুধু হিমায়িত আলুতেই কৃষকের লোকসান দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকার বেশি।

কৃষকেরা বলছেন, লোকসানের কারণে ভবিষ্যতে তারা আলু চাষে নিরুৎসাহিত হবেন। তরুণ উদ্যোক্তা নাহিদুজ্জামান জানান, ৪ একর জমিতে সাড়ে ৮ লাখ টাকা ব্যয় করে আলু চাষ করেছেন। উৎপাদন খরচ পড়েছে কেজিপ্রতি ২০ টাকা। কিন্তু হিমাগারের খরচ বাদ দিয়ে তিনি পেয়েছেন মাত্র ৫ টাকা ২৫ পয়সা। একই চিত্র দেখা গেছে রংপুরের অন্যান্য হিমাগারেও।

তারাগঞ্জের কৃষক নুর আলম বলেন, ‘আলুর খরচ কেজিপ্রতি ৩০ টাকা হলেও বাজারে পাচ্ছি মাত্র ১০ টাকা। লোকসান দিয়ে টিকে থাকা সম্ভব নয়। সরকার কোথায় ২২ টাকায় আলু কিনছে আমরা বুঝতে পারছি না।’

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারিভাবে আলু কেনা হলে কৃষকেরা উপকৃত হবেন। তবে এখনো সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। আগামী মৌসুমে চাষ কম হবে। কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে।’