কাগজ-কলমে রায়পুর পৌরসভা প্রথম শ্রেণির হলেও নাগরিক সেবার দিক থেকে এর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ময়লার স্তূপ, বেহাল রাস্তা, জলাবদ্ধতা, ড্রেনেজ সংকট, লোডশেডিং, যানজট ও দখলদারিত্বে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন পৌরবাসী।
জানা যায়, শহরের অধিকাংশ রাস্তারই বেহাল দশা। সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। সম্প্রতি ট্রাফিক মোড় থেকে উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে কিছু জায়গায় কংকর দিয়ে ভরাট করা হলেও টেকেনি এক বৃষ্টি। হায়দরগঞ্জ সড়কসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে নেই সড়কবাতি, ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। গত দুই বছরে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ নাগরিকদের।
এ ছাড়া লোডশেডিংয়ের কারণে পৌরসভার বিশাল জলাধার থেকে পানি তোলা যায় না, ফলে দেখা দিয়েছে পানির সংকট। প্রায় ১০ বছর আগে ঘোষিত পৌর শিশুপার্কের প্রকল্প এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। বন্ধ হয়ে আছে মিনি স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজও।
অবকাঠামো অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতাও বাড়ছে শহরে। পৌরসভা কার্যালয়ের সামনের ম্যানহোলের ঢাকনা নেই টানা ২৫ দিন। টিএনটি সড়কসহ অধিকাংশ এলাকায় রাস্তার লাইট নষ্ট থাকায় অন্ধকারে চলতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। এতে চুরি-ছিনতাই, মাদক সেবন ও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। শহরের ফুটপাত দখল হয়ে গেছে অবৈধ দোকানপাটে। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক নেতাদের নীরব চাঁদাবাজির কারণেই এসব দখলদারিত্ব বহাল রয়েছে। ট্রাফিক মোড় থেকে নতুন বাজার ও পুরোনো শহিদ মিনার পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই তীব্র যানজট দেখা দেয়।
যানজটের অন্যতম কারণ অনুমোদনহীন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য। পৌর শহরে কয়েক মাসেই শত শত নতুন অটোরিকশা নেমেছে। দুই দিন আগে পৌরসভা প্রতিটি অটোরিকশা থেকে ১০ টাকা করে টোল বন্ধ করে বছরে তিন হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করেছে। তবে অদক্ষ চালকদের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি ট্রাক ও পিকআপের অবৈধ পার্কিংও যানজটকে আরও তীব্র করছে। এ ছাড়া যত্রতত্র ময়লার স্তূপ ও ডোবায় জমা আবর্জনা মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সচেতন মহলের অভিযোগ, পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত এই শহরে গত দুই বছরে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি।
রায়পুর পৌরসভার প্রশাসক (ইউএনও) ইমরান খান এসব সমস্যা স্বীকার করে বলেন, ‘অনিয়ম বন্ধ ও সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি। যানজট নিরসন ও ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে নিয়মিত অভিযান চলছে। এ কাজে সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাই।’