বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মুজিবুর রহমান রঞ্জু, কমলগঞ্জ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫, ০১:৪৪ এএম

নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত খাসিয়ারা

মুজিবুর রহমান রঞ্জু, কমলগঞ্জ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫, ০১:৪৪ এএম

নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত খাসিয়ারা

  • বন বিভাগের বাধায় পৌঁছায়নি বিদ্যুতের সংযোগ
  • শিক্ষার জন্য নেই পর্যাপ্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • শুষ্ক মৌসুমে দেখা দেয় বিশুদ্ধ পানির অভাব
  • পুঞ্জিগুলো দুর্গম পাহাড়ে হওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা নাজুক

ভারতের মেঘালয় থেকে কয়েকশ বছর আগে সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন পাহাড়ি টিলায় বসতি গড়ে খাসিয়া উপজাতির মানুষ। বসবাসের জন্য সিলেটের পাহাড়ি এলাকায় বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে সমন্বয় করে বনের টিলা জমিতে নির্মাণ করে বসতঘর। তাদের পাড়াগুলো পুঞ্জি হিসেবে পরিচিত। মৌলভীবাজারের ৭ উপজেলায় এমন ৬১টি পুঞ্জি রয়েছে খাসিয়াদের। কিন্তু সমতল থেকে দূরে দুর্গম এবং বন বিভাগের সরকারি জমিতে বসতি হওয়ায় নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত  এ সম্প্রদায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের এসব পুঞ্জিতে অন্তত ২৫ হাজার খাসিয়া বসবাস করছে। তাদের বেশির ভাগ পুঞ্জিতে বন বিভাগের বাধার কারণে বিদ্যুতের সংযোগ পৌঁছায়নি। শিশুদের শিক্ষার জন্য নেই কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্থানীয়ভাবে সরকারি কোনো চিকিৎসা কেন্দ্রও নেই। যোগাযোগব্যবস্থা খুব খারাপ। বিশুদ্ধ পানীয় জলের তীব্র অভাব। তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম পাহাড়ি এলাকায় পান ও সুপারি চাষ।

জানা গেছে, সিলেট বিভাগে ৯০টি খাসিয়াপুঞ্জি রয়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে ৬১টি, সিলেট জেলায় ৭ এবং হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার সীমান্তে ৫টি খাসিয়াপুঞ্জি রয়েছে। মৌলভীবাজারে প্রায় ৪০ পুঞ্জিতে এখনো বিদ্যুতের লাইন স্থাপন করা হয়নি। এতে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এসব পুঞ্জির একেকটিতে ৩০-৬০ পরিবারের বসবাস। পুঞ্জিগুলোয় মাত্র দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। শিশুদের পড়াশোনার জন্য নিজেরা অন্তত ৪০টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।

সম্প্রতি কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও বড়লেখা উপজেলার কয়েকটি পুঞ্জিতে দেখা যায়, এসব পুঞ্জিতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছেন। বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে অনেক নলকূপে পানি ওঠে না। দূরে পাহড়ি টিলার নিচ থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হয়। বর্তমানে তীব্র গরমে বিদ্যালয়গুলোয় ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের কষ্টে ক্লাস করতে হয়। কয়েকটি পুঞ্জি ছাড়া বেশির ভাগ পুঞ্জিতে যোগাযোগের ভালো ব্যবস্থা নেই। কোথাও কোথাও ওপরে ওঠার সিঁড়ি থাকলেও অধিকাংশ পুঞ্জিতে এ ব্যবস্থা দেখা যায়নি।

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রীমঙ্গল লাউয়াছড়া পুঞ্জির প্রধান (হেডম্যান) ফিলা পতমী জানান, খাসিয়ারা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে তাদের বিদ্যুৎ ছাড়া বসবাস করতে হচ্ছে। শিশুদের পড়ালেখা হচ্ছে না। মাত্র দুটি সরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। উঁচু জায়গায় বসবাস, অথচ ওপরে ওঠার রাস্তা নেই অনেক পুঞ্জিতে।

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি ও মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জির হেডম্যান জিডিশন প্রধান সুচিয়াং বলেন, ‘বেশির ভাগ পুঞ্জিতে বিদ্যুৎ নেই। অথচ মৌলভীবাজারকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন জেলা ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা ভূমির অধিকার এখনো পাইনি। বর্তমানে খাসিয়া পুঞ্জিতে নিজস্ব অর্থায়নে বিদ্যালয়গুলো পরিচালনা করতে হচ্ছে। সরকারিভাবে বিদ্যালয়গুলোয় একটি ভবনও করা হয়নি। আমরা বিদ্যুতের কথা বললে, বিদ্যুৎ বিভাগ বলে বন বিভাগের পক্ষ থেকে আপত্তি আছে। এ ছাড়া চিকিৎসা ও যাতায়াতব্যবস্থা একেবারে নাজুক।’

মৌলভীবাজার বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. নাজমুল আলম বলেন, ‘সংরক্ষিত বনে খাসিয়াপুঞ্জি থাকায় বন বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ বা রাস্তার জন্য অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। সরকার যদি অনুমতি দেয়, তাহলে আমাদের বাধা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক এবিএম মিজানুর রহমান বলেন, ‘খাসিয়াপুঞ্জিতে বিদ্যুতের সংযোগ দিতে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। পুঞ্জিগুলো সংরক্ষিত বনের ভেতর হওয়ায় বন বিভাগের আপত্তির কারণে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।’

জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, খাসিয়াপুঞ্জিগুলো পাহাড়ের ওপরে। এসব পুঞ্জিতে ওঠার সিঁড়িসহ অন্য কাজের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ-ছয়টি বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য গত বছর ২-৩ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ বছরও কয়েকটি বিদ্যালয়কে সহযোগিতা করা হবে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!