বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন ইয়ার্ডে দেড় যুগ ধরে পড়ে রয়েছে ৩০০টির বেশি মালবাহী ওয়াগন। রোদ-বৃষ্টির সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে প্রায় ১৭৫ কোটি টাকার সম্পদ। অথচ রেলপথ মেরামতের মতো সাশ্রয়ী বিকল্প থাকলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ না থাকার অজুহাতে এ ওয়াগনগুলোকে এখন স্ক্র্যাপ (পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ) হিসেবে বিক্রির চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ।
সান্তাহার, পার্বতীপুর ও সৈয়দপুর ইয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, বিসি ও বিসিএফজি (হপার) ধরনের শত শত মালবাহী ওয়াগন দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে পড়ে রয়েছে। মরিচা ধরা ওয়াগনগুলোর আশপাশে আগাছাও জন্মেছে। দেখে যে কেউ মনে করবে- ওয়াগানগুলো রেলের অবহেলার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সরকার প্রতিটি ওয়াগন আমদানিতে ব্যয় করেছে প্রায় ৫০-৫৫ লাখ টাকা করে। সেই হিসাবে ৩০০টির বেশি ওয়াগনের মোট মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা। অথচ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ সম্পদ এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব ওয়াগনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল অনেক আগেই শেষ হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলওয়ের এ অব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক ক্ষতির কারণ নয়, বরং তা রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় এবং পরিকল্পনার অভাবকেও স্পষ্ট করে তুলে ধরছে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার শ্রমিক ও প্রকৌশলীরা বলছেন, ওয়াগনগুলো কারখানায় নিয়ে গেলে মেরামত করে আবার সচল করা সম্ভব। বিশেষত, একটি ওয়াগন চালাতে প্রয়োজন ১৬টি মেটালিসটিক রাবার ইউনিট, প্রতিটির দাম ৬-১২ হাজার টাকা। অথচ এ সস্তা যন্ত্রাংশের অভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ বছরের পর বছর অচল হয়ে পড়ে রয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক উপসহকারী প্রকৌশলী জানান, প্রায় ৭০ বছর আগে আমদানি করা বিসি ওয়াগনগুলোর বেশির ভাগই এখন সচল নয়। শুধু রাবার ইউনিট নয়, চাকা, বডি ও বেয়ারিংয়ের অবস্থাও খুব খারাপ। তবে তিনি স্বীকার করেন, যেগুলো আংশিক ভালো আছে, সেগুলো মেরামত করলে ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব।
রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শেখ রোবায়েতুর রহমান বলেন, কাগজে-কলমে মেয়াদ শেষ হলেও এসব ওয়াগন মেরামতের মাধ্যমে আবার সচল করা যায়। অথচ রেল কর্তৃপক্ষ একদিকে বলছে মালবাহী ওয়াগনের চাহিদা নেই, অন্যদিকে ভারত থেকে নতুন করে ৪২০টি ওয়াগন আমদানি করছে।
তিনি আরও জানান, যাত্রীবাহী কোচের ক্ষেত্রেও অর্থনৈতিক মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ‘জিওএইচ প্রকল্পে’ মেরামতের মাধ্যমে সেগুলোকে আবার চালু করা হয়। মালবাহী ওয়াগনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রয়োগ করা যেত।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী সাদেকুর রহমান বলেন, ‘ওয়াগনগুলোর বেশির ভাগই ৭০ বছরের পুরোনো। অর্থনৈতিক আয়ু সাধারণত ৪০-৪৫ বছর। আমরা মেরামতের চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু আবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’