- উদ্বোধনের ছয় বছরেও চালু হয়নি কোনো কারখানা
- ৫০ কোটি টাকায় নির্মিত ১২১টি প্লটের মধ্যে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৫৮টি
- জমির উচ্চমূল্য, নিরাপত্তাহীনতা ও প্রশাসনিক সংকটে উদ্যোক্তাদের অনাগ্রহ
- খালি প্লটগুলো এখন জঙ্গল ও চুরির আতঙ্কে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিসিক শিল্পনগরী উদ্বোধনের ছয় বছর পার হলেও সেখানে এখনো একটি শিল্প-কারখানাও গড়ে ওঠেনি। আধুনিক অবকাঠামো আর সব ধরনের সুবিধা থাকা সত্ত্বেও উদ্যোক্তাদের আগ্রহের অভাবে পুরো এলাকা এখন জঙ্গলে ঢেকে গেছে।
২০১২ সালে ২০ একর জমির ওপর বিসিক শিল্পনগরীর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। একাধিক অফিস ভবন, বাউন্ডারিওয়াল, পাম্প হাউস, কোয়ার্টার, মসজিদ ও ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়। পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ছয় বছরেও এখানকার শিল্প এলাকা রয়ে গেছে ফাঁকা, তালাবদ্ধ অবস্থায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, খালি প্লটগুলোতে এখন ঝোপঝাড় ও লতাপাতার রাজত্ব। দীর্ঘদিন নজরদারিহীন থাকায় ইতিমধ্যে তিনবার ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনাও ঘটেছে।
বিসিক সূত্রে জানা যায়, শিল্পনগরীর ১২১টি প্লটের মধ্যে প্রথম বছর তিন উদ্যোক্তাকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলেও তারা পরে তা বাতিল করেন। চতুর্থ বছরে ৫৮টি প্লট বরাদ্দ হয়, যার মধ্যে ২০% ডাউন পেমেন্ট হিসেবে প্রায় ৬ কোটি টাকা জমা পড়ে।
তবে উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, বিসিকের প্লটের দাম তিন গুণ বেশি হওয়ায় বিনিয়োগ লাভজনক নয়। একই সঙ্গে এখানে কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা, প্রচারণা বা নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় তারা বিনিয়োগে আগ্রহী নন।
শ্রীমঙ্গল বিসিকের এস্টেট অফিসার মুনায়েম ওয়ায়েছ বলেন, ‘আমরা বিজ্ঞাপন, সেমিনার ও কর্মশালার মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আগ্রহী করার চেষ্টা করছি। কিন্তু প্লটের উচ্চমূল্য এবং পরিবেশগত সমস্যার কারণে আগ্রহ কম।’
বিসিকের উপব্যবস্থাপক মো. মাহামাদুল হাসান রুপালী বলেন, ‘বরাদ্দ পাওয়া ৫৮টি প্লটের মধ্যে ৪০টি প্লটের মালিক এ বছর কারখানা নির্মাণ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে এখনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ না হওয়ায় কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে।’
তিনি আরও জানান, ‘বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধাজনকভাবে ২০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ১০ কিস্তিতে প্লট কেনার সুযোগ রাখা হয়েছে। আশা করছি, আগামী বছর থেকেই কিছু শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে।’
উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকারি সহায়তা ও ভর্তুকি না পেলে শ্রীমঙ্গলের বিসিক প্রকল্পের সম্ভাবনা পুরোপুরি হারিয়ে যাবে।