- প্রকৃত জেলেদের বাদ দিয়ে অন্য পেশার মানুষ তালিকাভুক্ত হয়েছে
- সহায়তার চাল ও গরু বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ
- ৫৫৪ জন পেশাজীবী জেলে কার্ডবিহীন, বঞ্চিত সহায়তা থেকে
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় প্রকৃত জেলেদের বাদ দিয়ে অন্য পেশার লোকদের জেলের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া নিবন্ধিত জেলেদের সরকারি সহায়তার কার্ড বিতরণেও নানা অনিয়মের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় পেশাজীবী জেলেরা।
অভিযোগ রয়েছে, মা মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারি সহায়তা হিসেবে নিবন্ধিত প্রতি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হলেও প্রকৃত জেলেদের অনেকেই এ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অন্যদিকে, জেলে নয় এমন ব্যক্তিরা সরকারি সহায়তা পেয়েছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত তালিকা সংশোধন করে প্রকৃত জেলেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
পোল্যাকান্দি নামাপাড়ার জেলে আছিম উদ্দিন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছি। আমার বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে, এখন সরকারি জমিতে ঘর তুলে থাকি। কিন্তু আমার নাম নিবন্ধিত হয়নি। কোনো সরকারি সহায়তাও পাইনি।’
জেলে নুদু মিয়া বলেন, ‘বছরের পর বছর মাছ ধরে সংসার চালাচ্ছি। সরকারি কোনো সহায়তা পাইনি। গরু বিতরণের সময় চাইলেও আমাকে দেওয়া হয়নি, অথচ অনেক সচ্ছল পরিবার গরু পেয়েছে।’
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন খ-কালীন জেলে জানান, তারা সরকারি সহায়তার চাল পেলেও তাদের গ্রামের অনেকেই আছেন যারা জেলে না হয়েও এ চাল পাচ্ছেন। আবার প্রকৃত অনেক জেলে আছেন যাদের নাম সরকারি তালিকায়ই নেই।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় মোট ৪ হাজার ৬৩৮ জন জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে ৪ হাজার ৮৪ জন নিবন্ধিত এবং ৫৫৪ জন নিবন্ধনবিহীন। মৃত্যুবরণ, স্থানান্তর ও বিভিন্ন ত্রুটির কারণে এই ৫৫৪ জনের নাম তালিকা থেকে বাদ গেছে।
নিবন্ধিত ৪ হাজার ৮৪ জন জেলের মধ্যে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভায় ৩৪৭ জন, সদর ইউনিয়নে ২১৯ জন, চিকাজানী ইউনিয়নে ৫৭১ জন, চুকাইবাড়ি ইউনিয়নে ২৬২ জন, বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নে ৮৮৮ জন, হাতীভাঙ্গা ইউনিয়নে ১১০ জন, পাররামরামপুর ইউনিয়নে ৪৯৩ জন, চর আমখাওয়া ইউনিয়নে ৩২৫ জন এবং ডাংধরা ইউনিয়নে ৮৮৯ জন রয়েছেন।
২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে প্রথম জেলে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময় অনেকের নাম তালিকাভুক্ত হলেও পরে কিছু ত্রুটি ও মৃত্যুর কারণে তথ্য হালনাগাদ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
অন্যদিকে, ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় অসহায় জেলে পরিবারের মধ্যে গরু (বকনা বাছুর) বিতরণেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ জন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪০ জন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫০ জন এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩২ জনসহ মোট ১৩২ জন জেলে পরিবারকে গরু দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু জেলেদের অভিযোগ, প্রকল্পে উল্লিখিত নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবান, দেশি জাতের ৭-১০ মাস বয়সি ৪০-৫০ কেজি ওজনের গরু বিতরণ করা হয়নি। বরং কম বয়সি ও দুর্বল গরু দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম বলেন, ‘২০০৭-০৮ সালের তালিকাই আমরা ব্যবহার করছি। নতুন করে নাম অন্তর্ভুক্তির অনুমতি পেলে প্রকৃত জেলেদের নাম যোগ করা হবে। আর গরু বিতরণে কোনো অনিয়ম হয়নি; উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী সুস্থ ও মানসম্মত বকনা বাছুরই বিতরণ করা হয়েছে।’
স্থানীয় জেলে সমাজের দাবি, পুরোনো ত্রুটিপূর্ণ তালিকা সংশোধন করে প্রকৃত জেলেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হলে সহায়তার সুবিধা সঠিকভাবে পৌঁছাবে এবং জেলেদের প্রতি সরকারি আস্থাও ফিরে আসবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন