বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসানুজ্জামান হাসান, কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট)

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ১২:২৬ এএম

তিস্তাপাড়ে তীব্র পানি সংকট-অনিশ্চয়তা

হাসানুজ্জামান হাসান, কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট)

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ১২:২৬ এএম

তিস্তাপাড়ে তীব্র পানি সংকট-অনিশ্চয়তা

**** বর্ষায় ভয়াবহ বন্য, শুষ্ক মৌসুমে পরিণত হয় মরুভূমির মতো বালুচর
**** গত এক দশকে তিস্তা নদীর ভাঙনে বাস্তুহারা ২০ হাজারেরও বেশি পরিবার
**** নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরুর দাবি

উত্তরাঞ্চলের প্রাণ খরশ্রোতা তিস্তা নদী এখন মৃতপ্রায়। একসময়ের খরস্র্রোতা এই নদী এখন বছরের অধিকাংশ সময় শুকিয়ে থাকে। বর্ষায় ভাসে, আবার শীতে পরিণত হয় মরুভূমির মতো বালুচরে। নদীভাঙন, চর গঠন ও তীব্র পানির সংকটে তিস্তাপাড়ের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা ও দুর্ভোগ।

হিমালয়ের গ্লেশিয়ার থেকে উৎপন্ন তিস্তা নদী ভারতের সিকিম রাজ্য পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি অতিক্রম করে বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম দিয়ে প্রবেশ করেছে। এরপর নদীটি নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা হয়ে ব্রহ্মপুত্রে মিলিত হয়েছে। এই তিস্তা নদীকে ঘিরেই উত্তরবঙ্গের কৃষি, মৎস্য, সংস্কৃতি ও জীবন-জীবিকা গড়ে উঠেছিল। একসময় এই নদীর চরাঞ্চলে ধান, পাট, ভুট্টা, তিল ও সবজি চাষে ছিল সমৃদ্ধি।

১৯৮৩ সালে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণের পর থেকেই তিস্তার স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব, আর বর্ষায় ভয়াবহ বন্যা এখন নিয়মিত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, গত এক দশকে তিস্তা নদীর ভাঙনে ২০ হাজারেরও বেশি পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। নদীর তীরঘেঁষে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি লালমনিরহাটের মহিপুর এলাকায় তিস্তা সেতু রক্ষা বাঁধের ৩৫০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। রাজারহাটে ৪টি গ্রামে ৭ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি, গঙ্গাচড়ায় ৫০টিরও বেশি পরিবার ঘর হারিয়েছে এবং কুড়িগ্রামের উলিপুরে শতাধিক বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে।

তিস্তা বাঁচাতে গত কয়েক বছরে উত্তরাঞ্চলে একের পর এক আন্দোলন হয়েছে। তিস্তা বাঁচাও, উত্তরবঙ্গ বাঁচাও স্লোগানে রংপুর বিভাগজুড়ে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও মশাল মিছিল হয়েছে। অবশ্য এসব কর্মসূচি এখনো রয়েছে অব্যাহত। সাম্প্রতিক কর্মসূচিতে নদীর ১১৫ কি.মি. জুড়ে ৪৮ ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় মানুষ ও পরিবেশবাদীরা।

এ নিয়ে ১৬ অক্টোবর গোটা দেশে সাড়া ফেলানো কর্মসূচি পালিত হয়। এদিন সন্ধ্যায় তিস্তার দুই তীরে একযোগে মশাল প্রজ্বালন করে স্লোগান তোলেন, জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই! এই কর্মসূচিতে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার-লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধার কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন।

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের দাবি, বাংলাদেশ-ভারত তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত কার্যকর করতে হবে। তিস্তা মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। প্রস্তাবিত মাস্টারপ্ল্যানে নদী পুনর্খনন, চরবাসীর পুনর্বাসন ও বাঁধ সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিক বাজেট অনুযায়ী প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।

এ বিষয়ে তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলন সূত্রে জানা গেছে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা কাজ শুরু হবে। এজন্য সরকার ইতোমধ্যে প্রথম ধাপের জন্য ২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দও  দিয়েছে বলে জানা যায়।

১০ বছরের মেয়াদে দুই ধাপে এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ধাপে (৫ বছর) ব্যয় হবে ৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৬ হাজার ৭শ’ কোটি আসবে চীন থেকে ঋণ হিসেবে এবং ২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।

তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, সরকার যদি নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু না করে,- তবে তিস্তাপাড়ের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সেই আন্দোলনের মাধ্যমে গোটা রংপুর বিভাগকে অচল করে দেওয়া হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!