গাজায় যা ঘটছে, তা নিঃসন্দেহে মানবতাবিরোধী অপরাধ। ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলায় হাজার হাজার নিরীহ মানুষ, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা প্রাণ হারাচ্ছেন। এই ধ্বংসযজ্ঞকে অনেকেই ‘গণহত্যা’ হিসেবে দেখছেন। অথচ পশ্চিমা দেশগুলোর সরকারগুলো এখনো দ্ব্যর্থপূর্ণ অবস্থান নিচ্ছে-কেউ পুরোপুরি নীরব, আবার কেউ প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে অস্ত্র ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন দেশের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, এই সহিংসতার বিরুদ্ধে জোরালোভাবে প্রতিবাদ করছেন। সিএনএনের এক জরিপ অনুযায়ী, মাত্র ৮ শতাংশ মার্কিন ডেমোক্র্যাট ইসরায়েলের পদক্ষেপকে সমর্থন করেন। ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এর পর থেকে বিশ্বজুড়ে জনমতের পরিবর্তন ঘটেছে। অনেকের চোখ খুলেছে, এবং তারা এখন সরাসরি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলছেন।
এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া শুধু মিছিল বা বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ নয়। বহু মানুষ নৈতিক অবস্থান থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পণ্য ও সেবার বর্জন করছেন, সম্পর্ক ছিন্ন করছেন, এমনকি নিজের পরিচিতজনদের থেকেও দূরে সরে যাচ্ছেন যারা এই সহিংসতাকে সমর্থন করেন। এটি নিছক রাগ নয়- এটি বিবেক থেকে উঠে আসা এক ধরনের নৈতিক প্রতিবাদ।
এই সংঘাতকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বিভ্রান্তি বাড়ে। অনেক মুসলিম নেতা রাজনৈতিক স্বার্থে নীরব, আবার বহু ইহুদি- বিশেষ করে ইসরায়েলের বাইরের- এই হত্যাকাণ্ডের কড়া প্রতিবাদ করছেন। অনেক অমুসলিমও এটিকে ঘৃণার চোখে দেখছেন। তাই এটা শুধু মুসলিম-ইহুদি ইস্যু নয়- এটা মূলত ন্যায়-অন্যায়ের লড়াই।
শান্তি কি সম্ভব?
যুদ্ধবিরতি মাঝেমধ্যে হলেও প্রকৃত শান্তি আসছে না। ডোনাল্ড ট্রাম্প এর মধ্যে কিছুটা কৃতিত্ব দাবি করলেও, তার কোনো দীর্ঘমেয়াদি শান্তি পরিকল্পনা নেই। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’—যেখানে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গঠিত হবে- এটাই একমাত্র বাস্তব ও স্থায়ী সমাধান হতে পারে। কিন্তু ইসরায়েল এরই মধ্যে জানিয়েছে, তারা এই সমাধান মানবে না।
বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, ইসরায়েল গাজার ফিলিস্তিনিদের স্থানচ্যুত করে সেই জমিকে ‘লাভ’ হিসেবে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এই পরিকল্পনাকে ‘রিভেরা পরিকল্পনা’ বলা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প, টনি ব্লেয়ার ও তাঁদের ঘনিষ্ঠরা এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করছেন। যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে।
পশ্চিমাদের দ্বিচারিতা
পশ্চিমা সরকারগুলো মুখে শান্তি ও মানবাধিকারের কথা বললেও, বাস্তবে তারা ইসরায়েলকে সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এই দ্বিচারিতা এখন আরও স্পষ্ট। তারা অস্ত্র বিক্রি করছে, রাজনৈতিক সমর্থন দিচ্ছে, এবং ন্যায়ের প্রশ্নে চুপ থাকছে।
এই দ্বিমুখী আচরণই অনেকের কাছে পশ্চিমা বিশ্বের নৈতিক মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে। গাজার রক্তাক্ত বাস্তবতায় এই ভণ্ডামির মুখোমুখি হয়ে বিশ্বব্যাপী মানুষ নতুন করে ভাবছে- মানবতার নামে কারা আসলে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে, আর কারা নিজের স্বার্থে অন্যায়ের পাশে থেকেও নীতিকথা বলছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন