শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সজীব আলম, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৫, ০১:৫৫ এএম

মাদক-চোরাচালানেই চলে সংসার

সজীব আলম, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৫, ০১:৫৫ এএম

মাদক-চোরাচালানেই চলে সংসার

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়ন ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত। ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে চারটি সীমান্তঘেঁষা। দীর্ঘদিন ধরেই এই এলাকা মাদক চোরাচালান ও অন্যান্য অবৈধ ব্যবসার জন্য পরিচিত। স্থানীয়দের অভিযোগ, গোড়ল ইউনিয়নের প্রায় ৭০ শতাংশ বাসিন্দা মাদক ও বিভিন্ন পণ্য চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে কেউ ফেনসিডিল বা গাঁজা বিক্রি করেন, কেউ ভারত থেকে পণ্য পাচার করেন।

এ ছাড়া, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পুলিশ প্রশাসন মাসোহারা আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, মাসোহারা ব্যবসাভেদে ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে নিচ্ছে। সীমান্তবর্তী এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ ও যুবসমাজ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অনেক পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, ফলে গোড়ল ইউনিয়নে জীবনধারা এখন প্রভাবিত এবং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এদিকে মাদক নিয়ন্ত্রণে গোড়ল ইউনিয়নে ২০২১ সালে স্থাপন করা হয় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র (ফাঁড়ি)। আর মাদকপ্রবণ এলাকা হওয়ায় ফাঁড়ির ইনচার্জ পদে কাউকে এক বছরের বেশি সময় রাখে না পুলিশ বিভাগ। কিন্তু বর্তমান অভিযুক্ত ইনচার্জ এসআই মোস্তাকিম ইসলামের কর্মস্থানে এক বছর পেরিয়ে গেছে। এতে তার সঙ্গে স্থানীয় মাদক ও চোরাচালানকারীদের সখ্য গড়ে উঠছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

নিয়মিত মাসোহারা দেওয়া একাধিক মাদক মামলার আসামি জানান, মাসোহারার টাকা গোড়ল ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোস্তাকিম ইসলামের মাধ্যমে নিচতলা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পকেটে পৌঁছে যায়। মাসোহারা তোলেন কনস্টেবল ফারুক ইসলাম।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোড়ল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের লোহাকুচি সীমান্ত, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বালাটারী, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বগুড়াপাড়া, বলাইরহাট এবং ১ নম্বর ওয়ার্ডের বুড়িরহাট বাজার সীমান্তঘেঁষা এলাকা। এসব এলাকার ৭০ শতাংশ মানুষ মাদকের কারবার, চোরাচালানসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এসব অপরাধ তাদের নিত্যদিনের কাজ। এলাকার বহু পরিবার কয়েক প্রজন্ম ধরে এসব অবৈধ ব্যবসা করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।

ইউনিয়নের কেউ বিক্রি করে ফেনসিডিল, কেউ বেচে গাঁজা, কেউ মাদক বহন করে, কেউ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের গুলির ঝুঁকি নিয়ে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে গরু পারাপারের সঙ্গে যুক্ত, আবার কেউ স্বর্ণ পাচার, হু-ি ও মানব পাচারেও জড়িত হয়ে পড়েছে। এসব কারণে এলাকার যুবসমাজ ধ্বংসের মুখে পড়েছে।

কিন্তু যারা এসব কাজের বাইরে আছে, তারা রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। কারণ মুখ খুললেই চলে হেনস্তা, মারধর। আবার কাউকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়। সম্প্রতি এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

স্থানীয়দের দাবি, পুলিশের নাকের ডগায় প্রতিদিন মোটরসাইকেলে মাদক চোরাচালান, সেবন ও বেচাকেনা হচ্ছে। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে কিছু মাদক উদ্ধার হলেও মূল ব্যবসায়ীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও নিরীহ মানুষকে আটক, মারধর ও চাঁদা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।

সম্প্রতি সাইদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন যে, গত ৯ অক্টোবর রাতে গোড়ল তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ মোস্তাকিম ইসলাম তাকে বিনা কারণে আটক করে মারধর ও টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর হুমকিও দেন। ভয় পেয়ে তিনি ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে ২০ হাজার টাকাও দিয়েছেন।

এর আগেও ওই ইনচার্জের বিরুদ্ধে মোফাজ্জল হোসেন মোফা নামের এক ব্যক্তিকে নির্যাতন করে পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ভুক্তভোগী জানান, তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ভিডিও বক্তব্য দিতে বাধ্য করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালগাড়া গ্রামের মাদ্রাসাশিক্ষক বলেন, সম্প্রতি তৌহিদুল নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে কিছু না পেয়ে পুলিশ নদীপাড় থেকে গাঁজা উদ্ধার করে তার নামে মামলা দেয়। অভিযোগ রয়েছে, গোড়ল পুলিশের কিছু সদস্যের সঙ্গে মাদক কারবারিদের সুসম্পর্ক রয়েছে।

এ বিষয়ে গোড়ল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোস্তাকিম ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি যোগদানের পর ইউনিয়নের ময়নারচওড়া এলাকায় মাদক সরবরাহ অনেকটা কমেছে। তাই মাদক ব্যবসায়ীরা আমাকে বিপদে ফেলতে এসব মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে।’

লালমনিরহাট পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গোড়ল ও চন্দ্রপুর ইউনিয়নে ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ মাদক ও চোরাচালানে জড়িত, যা পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফাঁড়ি ইনচার্জের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং নিরীহ কাউকে হয়রানি করা হবে না। মাদক নিয়ন্ত্রণে সামাজিক সচেতনতা কার্যক্রমও চলছে।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!