- তরুণ-যুবক অনলাইন জুয়ার ফাঁদে
- কোটি টাকা পাচার মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে
- পরিবারে অশান্তি ও কলহ বৃদ্ধি
- অপরাধ ও মাদকের ঝুঁকি বেড়ে গেছে
বর্তমান সময়ে অনলাইন জুয়া দেশের যুবসমাজের জন্য মারাত্মক হুমকিতে পরিণত হয়েছে। এক ক্লিকেই ধ্বংসের ফাঁদে পড়ে যাচ্ছেন তরুণ-যুবক, শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও চাকরিজীবীরা। শহর থেকে গ্রাম, প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এই ভয়ংকর আসক্তি। অল্প সময়ে দ্রুত আয় করার লোভে তারা জড়িয়ে পড়ছে এই খেলার মধ্যে। স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে আগে যেখানে শহরেই সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তা গ্রামাঞ্চলেও প্রবেশ করেছে। এর ফলে পারিবারিক অশান্তি, দাম্পত্য কলহ এবং অপরাধের প্রবণতা বেড়ে গেছে।
নলছিটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তরুণ, যুবক, দিনমজুর এবং কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও অনলাইন জুয়ার ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছে। সুবিদপুরের এক কলেজ শিক্ষার্থী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানালেন, তিনি এবং তার বন্ধুরা ৫০০ টাকা জমা দিয়ে খেলা শুরু করেছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই টাকা হারিয়ে গেছে। পরবর্তীতে ১৫-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। পৌর শহরের এক চাকরিজীবী বাড়তি আয়ের আশায় অনলাইন জুয়ার ফাঁদে পড়ে কয়েক লাখ টাকা হারিয়ে এখন ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ ধরনের মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অনলাইন জুয়া খেলা হচ্ছে। এসব অ্যাপের অধিকাংশই বিদেশ থেকে পরিচালিত হলেও বাংলাদেশে এদের স্থানীয় প্রতিনিধি বা দালাল রয়েছে, যারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা আদান-প্রদান করেন। প্রতি হাজার টাকায় এজেন্টরা অন্তত ৪০ টাকা কমিশন পায়। এর ফলে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।
উপজেলার পৌর শহরের লঞ্চঘাট, বাইপাস মোড়, তালতলা, কলবাড়ী, নাচনমহল, ভবানীপুর, মানপাশা, কুলকাঠি, শিমুলতলা, আখরপাড়া, চন্দ্রকান্দা, কয়ারচরসহ বিভিন্ন স্থানে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অনলাইন জুয়ার আসর বসছে। অনেকেই দোকান, রাস্তার মোড় বা চায়ের দোকানে বসে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বাজি ধরে খেলছেন।
রাজমিস্ত্রি পেশার এক ব্যক্তি জানান, জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি অনলাইন জুয়ার লোভে কয়েক মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আরও বেশি জুয়া খেলতে বাধ্য হচ্ছেন। সচেতন মহল বলছে, অনলাইন জুয়া শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, এটি সমাজে নৈতিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের ওপরও ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলছে। হারানো টাকা তুলতে গিয়ে অনেকেই মাদকাসক্তি, চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন।
নলছিটি থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুস সালাম বলেন, জুয়া খেলা আইনত দ-নীয় অপরাধ। আমরা অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। সচেতন মহল বলছে, শুধু আইন প্রয়োগ নয়, পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পর্যায়ে নজরদারি এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরি।
এ অবস্থায় অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে যুবসমাজের সর্বস্ব হারানো এবং অপরাধ প্রবণতার বৃদ্ধি অনিবার্য বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

