ঢাকা শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫

গরিবের কপালে পোকা ধরা চাল!

রাকিবুল ইসলাম, পূর্বাচল
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৫, ০১:৩২ এএম

*** খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি
*** একই বস্তার দুই পাশে দুই রকম মেয়াদ
*** খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ
*** শেখ হাসিনার স্লোগানযুক্ত বস্তায় চাল বিতরণ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পোকা ধরা ও দুর্গন্ধযুক্ত নষ্ট সরকারি চাল বিতরণের অভিযোগ উঠেছে। একই বস্তার এক পাশে ২০২২ সালের মেয়াদ এবং অপর পাশে ২০২৫ সালের মেয়াদ লেখা রয়েছে। আবার ‘শেখ হাসিনার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র স্লোগানযুক্ত বস্তায় মেয়াদোত্তীর্ণ এই চাল বিতরণ করা হয়।

উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩০ জনের অধিক নারী ও পুরুষ ২২০ টাকা সঞ্চয় জমা দিয়ে খাদ্যবান্ধব সরকারি সহায়তার নামে ৩০ কেজি করে চাল নিচ্ছেন। গত মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে এ ঘটনার সত্যতা মেলে। পরিষদের হলরুমে প্রবেশ করে দেখা যায়, শতাধিক সরকারি চালের বস্তা রাখা হয়েছে। এসব বস্তার বেশির ভাগই ইঁদুরের কামড়ে ছেঁড়া, চালের ভেতর পোকা কিলবিল করছে, সঙ্গে তীব্র দুর্গন্ধ।

স্থানীয় কয়েকজন সুবিধাভোগী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, এসব চাল প্রকৃত দরিদ্ররা পাননি; সদস্যদের আত্মীয়-স্বজন ও প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠরা পেয়েছেন। একাধিক সুবিধাভোগী অভিযোগ করে বলেন, নষ্টচাল খাওয়ার উপযোগী নয়, গরু-মুরগিকে দিই। তবে বাইরে বলি, আমরা খাই।

আরেক ভুক্তভোগী বলেন, পচা, ছত্রাকযুক্ত, পোকামাকড় ও দুর্গন্ধযুক্ত চাল দেওয়া হচ্ছে। গরিব মানুষ আমরা। বাধ্য হয়ে এখান থেকে কার্ডের মাধ্যমে কম টাকায় চাল কিনি। কিন্তু তা খাওয়া যায় না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে অবহেলা এবং অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজের সুযোগেই পুরোনো নষ্ট চাল বিতরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

নষ্ট চাল বিতরণের বিষয়ে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার মাসুম মিয়া বলেন, উপজেলা খাদ্যগুদাম থেকে যা পাই, তা-ই বিতরণ করি। কেন নষ্ট চাল দিয়েছে, তা সচিব জানেন।

ইউনিয়ন সচিব মো. রিয়াজউদ্দিন বলেন, আমরা শুধু বরাদ্দ অনুযায়ী বিতরণ করি, চালের মান যাচাইয়ের দায়িত্ব উপজেলা কর্তৃপক্ষের। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, খাদ্যে কী আছে বা কী নেই তা নিয়ন্ত্রক ও গুদাম কর্মকর্তার বিষয়। আমরা শুধু বিতরণের দায়িত্বে।

এদিকে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আরিফ মোহাম্মদ বলেন, আমি একসঙ্গে দুই স্থানে কর্মরত থাকায় সব সময় উপস্থিত থাকতে পারি না। তবে গুদাম পরিচালক এ বিষয়ে জানবেন।

গুদাম পরিচালক আসাদুজ্জামান তুহিন বলেন, গুদামে বিজ্ঞানসম্মতভাবে খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চাল তিন মাস আগে পাঠানো হয়েছিল। বিতরণে বিলম্ব হওয়ায় তা নষ্ট হতে পারে। বস্তায় ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদ বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছেÑ এক পাশে বস্তার, অন্য পাশে পণ্যের মেয়াদ লেখা থাকে।