শিশু থেকে বৃদ্ধÑ সব বয়সি মানুষের প্রিয় খাবারের তালিকায় অন্যতম আইসক্রিম। শহর থেকে গ্রাম, কনফেকশনারি দোকান থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী বাস পর্যন্ত সর্বত্রই পাওয়া যায় এই ঠান্ডা খাবার। কিন্তু স্বাদের এই আনন্দের আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকি। নোয়াখালীর বিভিন্ন স্থানে অনুমোদনহীন কারখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে ভেজাল আইসক্রিম।
জেলা সদর, মাইজদী, চৌমুহনী, চাটখিল, সুবর্ণচরসহ বিভিন্ন উপজেলায় অর্ধশতাধিক অবৈধ আইসক্রিম তৈরির কারখানা চলছে বছরের পর বছর। এসব কারখানায় কৃত্রিম রং, নি¤œমানের রাসায়নিক ফ্লেভার, ঘনচিনি ও দূষিত পানি ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে কুলফি, দুধমালাই, চকবার, আইসললিসহ বিভিন্ন নামের আইসক্রিম। এসব পণ্যের মোড়কে নেই কোনো উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ বা প্রস্তুতকারকের তথ্য।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একসময় এমন কারখানার সংখ্যা ছিল সীমিত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এখন জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন এসব কারখানায় হাজার হাজার আইসক্রিম তৈরি হয়ে হকারদের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে নি¤œবিত্ত পরিবারের শিশুদের হাতে।
এদিকে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানহীন ও রাসায়নিক মিশ্রিত আইসক্রিম শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এতে ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা, লিভারের ক্ষতি এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মজিবুল হক রুবেল বলেন, নি¤œমানের আইসক্রিমের মতো অস্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্য মানবদেহে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার কারণ হতে পারে। তাই যতটুকু সম্ভব এসব মানহীন ও রাসায়নিক মিশ্রিত আইসক্রিম এড়িয়ে চলতে হবে।
অন্যদিকে কিছু কারখানার মালিক দাবি করেছেন, তারা পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিভিল সার্জন অফিসের অনুমতি নিয়ে ব্যবসা করছেন। তবে বিএসটিআই নোয়াখালীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ মাসুম বিল্লাহ জানিয়েছেন, পুরো জেলায় যেসব আইসক্রিম কারখানা আছে, তার কোনোটিই বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নেই।
জেলার সচেতন মহল বলছে, ভেজাল খাদ্যের কারণে ধ্বংস হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবন। তাই অস্বাস্থ্যকর এসব আইসক্রিম কারখানায় দ্রুত অভিযান ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর ভূমিকা জরুরি।
জেলা নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মুহাম্মদ শামসুল আরেফিন বলেন, এসব অনুমোদনহীন কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসন বরাবর ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের আবেদন করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ পেলেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

