ঢাকা সোমবার, ০৩ নভেম্বর, ২০২৫

যমুনার ভাঙন আতঙ্কে ৯ গ্রামের মানুষ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৫, ০১:৩৯ এএম

*** শুষ্ক মৌসুমেও ভাঙন আতঙ্কে শাহজাদপুরের দুই ইউনিয়নের মানুষ
*** নদীতে বিলীন পাঁচ শতাধিক বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা
*** ভাঙনের ঝুঁকিতে ধীতপুর কুরসি হাট-বাজারসহ শত শত বিঘা ফসলি জমি
*** ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি স্থানীদের

বর্ষা-শরৎ শেষে হেমন্ত ঋতুর ১৫ দিন চলে গেছে- এমন শুষ্ক মৌসুমেও যমুনা নদীর ভাঙন আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার দুই ইউনিয়নের ৯ গ্রামের মানুষ। চলতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এসব অঞ্চলে ভাঙন শুরু হয়েছে। এখনো ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে পাঁচ শতাধিক বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে ঝুঁকিতে রয়েছে ধীতপুর কুরসি হাট-বাজারসহ শত শত বিঘা ফসলি জমি।

জানা যায়, উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়নের মাকড়া, ধীতপুর, শ্রীপুর, কুরসি, বারপাখিয়া ও লোহিন্দাকান্দি এবং গালা ইউনিয়নের বৃহাতকোড়া ও মোহনপুর গ্রামে শুষ্ক মৌসুমেও চলছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনের তা-বে এসব গ্রামের শত শত বিঘা ফসলি জমি, পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর, দুটি মসজিদ, দুটি মাদ্রাসা ও একটি কবরস্থান যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ধীতপুর-কুরসি গ্রামের দুটি হাট-বাজারের অর্ধেক অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

ভাঙনকবলিত মানুষ বলছেন, ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কয়েকদিনের মধ্যে এ হাট দুটি যমুনায় বিলীন হবে। তারা বলেন, যেখানে গত এক মাস আগেও বাড়িঘর ছিল, এখন সেখানে শুধই পানি আর পানি।

ধীতপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার প্রামাণিক, আসমা খাতুনসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যমুনা পারের এসব জমিতে ধান, বাদাম ও শীতকালীন সবজি আবাদ হয়ে থাকে। ১৯৮৮ সাল থেকে এখানে নদীভাঙন চলছে। আমরা ১০ থেকে ১২ দফায় ভাঙনের কবলে পড়েছি। কমেলা খাতুন, বাতেন বেপারি, আব্দুর রাজ্জাক সরদার, আব্দুস সামাদ ও মনোয়ারা বেগম বলেন, এ পর্যন্ত ১২-১৪ বার বাড়িঘর ও ফসলি জমি যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। আবার ভাঙনের কবলে পড়েছেন তারা। এখন তাদের রাত কাটে ভাঙন আতঙ্কে।

শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ৫-৬ বছরে এ দুটি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে কমপক্ষে ২৭০ হেক্টর ফসলি জমি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত কয়েক মাসের ভাঙনে ৭০-১০০ হেক্টর আবাদি জমি নদীতে বিলীন হওয়ায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর বিপরীত পাশেই ৮০-৯০ হেক্টর বালুর চর জেগে উঠেছে। কিন্তু তা এখনো আবাদযোগ্য হয়ে ওঠেনি। যমুনার ভাঙন তা-বে এ ইউনিয়নের জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় মানুষজন অসহায় হয়ে পড়েছেন। যে সব ফসলি জমি ভেঙে গেছে, সে সব জমির মালিক তাৎক্ষণিকভাবে চরম ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাদের প্রণোদনা দিয়ে এ ক্ষতি কিছুটা লাঘবে সহায়ক ভূমিকা রাখছে বলেও জানান তিনি।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, কুরসি-ধীতপুরের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি। তারা ভাঙন এলাকায় দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোকলেসুর রহমান বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা ভাঙনরোধে কাজ শুরু করব।