- রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় প্রতিদিন ড্রেজার মেশিনে তোলা হচ্ছে লাখ লাখ ঘনফুট বালু
 - নদীভাঙন, কৃষিজমি ধ্বংস এবং তীরবর্তী গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে
 - স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘পুলিশ ও প্রশাসন কমিশন নিয়ে বালু তোলায় সহযোগিতা করছে’
 
উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদ-নদী তিস্তা, ধরলা, যমুনেশ্বরীসহ অসংখ্য জলাধারে বালুখেকোদের দখলদারিত্ব এখন প্রকাশ্য। রাজনৈতিক ছত্রছায়া, প্রশাসনিক ‘ম্যানেজমেন্ট’ ও পুলিশের কমিশন বাণিজ্যে থামছে না এই অবৈধ বালু উত্তোলন। ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রতিদিন রাতের আঁধারে তোলা হচ্ছে লাখ লাখ ঘনফুট বালু। এতে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর নাব্য, ভেঙে যাচ্ছে তীরবর্তী বসতি ও কৃষিজমি।
রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলার একাধিক স্থানে চলছে এই ‘নদী হত্যার’ উৎসব। কোথাও নদীর গভীরতা ৬০-৭০ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে, আবার কোথাও সৃষ্টি হয়েছে মরুভূমির মতো উঁচু চরভূমি।
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের রাজরামপুর ও কাশিগঞ্জ এলাকায় বছরের পর বছর অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। স্থানীয় একটি চক্র আগে ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয়ে, এখন বিএনপি নেতাদের প্রশ্রয়ে ব্যবসা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এলাকার লোকজন জানান, প্রভাবশালী মোয়াজ্জেন আলী ও তার সহযোগীরা যমুনেশ্বরী নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলে বিক্রি করছেন। উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে কয়েক দফা মেশিন ধ্বংস করলেও পুনরায় তা চালু করা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউএনও সকালে অভিযান চালালেও বিকেলেই পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে ফের শুরু হয় বালু উত্তোলন। একাধিক বালু ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ‘প্রতিদিন থানা থেকে পুলিশ এসে কমিশন নিয়ে যায়। প্রশাসনকেও দিতে হয় অংশ। তাই কেউ কিছু করতে পারে না।’
এর ফলে মধুপুর ইউনিয়নের কাশিগঞ্জ গ্রাম, কৃষিজমি, এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সও হুমকির মুখে পড়েছে। বালু পরিবহনের ট্রলির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় সড়ক।
রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নদী থেকে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। খবর পেলেই অভিযান চলছে।’ গঙ্গাচড়ার ইউএনও মাহমুদুল হাসান মৃধা বলেন, ‘তিস্তা থেকে অবৈধ বালু তোলার সময় একাধিক ড্রেজার জব্দ ও ধ্বংস করা হয়েছে।’
বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, ‘গত দেড় মাসে ১৫-২০টি বালুর পয়েন্টে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু আগাম খবর পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে শুধু ড্রেজার পাওয়া যায়।’
অন্যদিকে, বদরগঞ্জ থানার ওসি এ কে এম আতিকুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কারো কাছ থেকে এক টাকাও নিইনি, বালুর বিষয়ে এক কাপ চাও খাইনি।’
মধুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোকসেদুল হক বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বাড়ির কাজের জন্য কিছু বালু তুলেছিলাম, কিন্তু অপপ্রচার শুরু হলে মেশিন তুলে ফেলেছি।’
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, তার ছত্রছায়ায় মোয়াজ্জেন আলী ও অন্যরা দীর্ঘদিন ধরে বালু ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক বিএনপি নেতা মন্তব্য করেন, ‘রাজনীতি করতে টাকা লাগে, বালু তুললে দোষ কী? আমরা তো প্রশাসনকে কমিশন দিয়েই বালু তুলি।’
নদী বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো অচিরেই মৃতপ্রায় হয়ে পড়বে। এতে নদীপাড়ের বসতি, ফসলি জমি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়বে। স্থানীয়রা বলছেন, বালুখেকোদের থামাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া আর কিছুই এখন কার্যকর হচ্ছে না।
        
                            
                                    
                                                                
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
                                    
                                    
                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                            
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন