টাঙ্গাইলে পৌরসভার বড় কালিবাড়ি এলাকায় বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কমিটির নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দুইটি বহুতল ভবন নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ মেসার্স ফাল্গুনী বিল্ডার্স ও বিএম বিল্ডার্স নামের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, পৌরসভার বড় কালিবাড়ি এলাকার পারদিঘুলিয়া মৌজার জে. এল নং-৬৪, খতিয়ান নং ১৬৫১, দাগ নং ৭১৫, ৭১৬, ৭১৭, জমির পরিমাণ-২০.৮০ শতাংশ এর ওপর এবং পাশাপাশি আরেকটি সি এস খতিয়ান নং-৩০, এস এ খতিয়ান নং ১৭৩, সিএস দাগ নং ৪৮৮, এস এ দাগ নং ৬৭৭, জমির পরিমাণ ২০ শতাংশ জায়গায় ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে ওই ভবন দুইটি।
গত ২৫ আগস্ট টাঙ্গাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানিতে ওই ভবন বিষয়ে অভিযোগ উপস্থাপিত হলে দুর্নীতি দমন কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কমিটির সদস্য সচিব শম্ভু রাম পাল স্বাক্ষরিত চিঠিতে ফাল্গুনী বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী আশুতোষ সাহা ওবিএম বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী মৃদুল চন্দ্র তালুকদারকে ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়।
চিঠিতে ফাল্গুনী বিল্ডার্সকে জনানো হয় ‘পারদিঘুলিয়া মৌজার জে. এল নং-৬৪, খতিয়ান নং ১৬৫১, দাগ নং ৭১৫, ৭১৬, ৭১৭, জমির পরিমাণ-২০.৮০ শতাংশ এর ওপর ৯ (নয়) তলা ভবন নির্মাণের নকশা অত্রাফিস থেকে অনুমোদন দেওয়া হয় কিন্তু নির্মাণ কাজের বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাইট পরিদর্শন পূর্বক অনুমোদিত শর্তাবলি হতে কিছু বিষয়ে অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় ত্রুটি সংশোধন না করা পর্যন্ত নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো’ এবং বিএম বিল্ডার্সকে জানানো হয় ‘মৌজা-পারদিঘুলিয়া, সিএস খতিয়ান নং-৩০, এস এ খতিয়ান নং-১৭৩, সিএস দাগ নং-৪৮৮, এস এ দাগ নং-৬৭৭, জমির পরিমাণ ২০ শতাংশ জায়গায় ওপর ১০ (দশ) তলা ভবন নির্মাণের নকশা অত্রাফিস থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু নির্মাণ কাজের বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাইট পরিদর্শন পূর্বক অনুমোদিত শর্তাবলি হতে কিছু বিষয়ে অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় ত্রুটি সংশোধন না করা পর্যন্ত নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো’। এ ছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর একটি পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়।
পরিদর্শন প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা হয়েছে, অনুমোদিত সাইট ম্যাপ মোতাবেক চতুর্পাশে সেট ব্যাক সঠিকতা নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে লে-আউট প্ল্যান অনুযায়ী সেপটিক ট্যাংক নির্মাণের জায়গা রাখা হয়নি। দ্বিতীয় তলার ফ্লোর এরিয়া বৃদ্ধি করায় পরবর্তী প্লট এ যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা রাখা হয়নি, ফলে অভিযোগকারীদের নিজস্ব জায়গায় যাতায়াত বা স্থাপনা নির্মাণে সমস্যা দেখা দিয়েছে। উভয় ভবন নির্মাণের বিষয়ে জায়গার যে কাগজাদি দাখিল করা হয়েছে, তা উপযুক্ত অফিস কর্তৃক পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বর্তমানে ভবন দুটির চারপাশে সীমানা নির্ধারিত না থাকায লে-আউট প্ল্যান অনুযায়ী ভবন নির্মাণ হয়েছে কি-না তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয় নাই। প্রতিবেদনে পরিদর্শন কর্মকর্তার মতামত হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ‘দ্রুত ভবন নির্মাণের জায়গাটি সঠিকভাবে নির্ধারণপূর্বক সেট ব্যাক পরিমাপ করা প্রয়োজন। যেহেতু জায়গা এবং ভবন নির্মাণে প্রাথমিকভাবে কিছু অনিয়ম পাওয়া গিয়েছে, তাই জায়গার সীমানা নির্ধারণসহ সেট ব্যাক পরীক্ষার পূর্ব পর্যন্ত ভবন দুটির নির্মাণকাজ সাময়িক বন্ধ রাখা প্রয়োজন’।
এ ব্যাপারে বিএম বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী মৃদুল চন্দ্র তালুকদার ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে বলে দাবি করেন। অন্যদিকে ফাল্গুনী বিল্ডার্সের পক্ষ থেকে স্বত্বাধিকারী আশুতোষ সাহার ছেলে পৌরসভা থেকে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন বলে দাবি করেন। তবে টাঙ্গাইল পৌরসভার পক্ষ থেকে অনুমতি দেয়া হয়নি বলে প্রতিবেদকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন পৌরকর্তৃপক্ষ।
টাঙ্গাইল জেলা বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কমিটির সভাপতি ও টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক বলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যদি নির্মাণকাজ চালিয়ে থাকে তাহলে যাচাই করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন