বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন তেল আমদানির ক্ষেত্রে রেকর্ড চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে আজ। দেশের শীর্ষ তিন সয়াবিন প্রক্রিয়াজাতকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান- সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ও ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ আগামী এক বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের সয়াবিন কেনার ঘোষণা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ঢাকার বনানীর একটি হোটেলে যুক্তরাষ্ট্র সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের (ইউএসএসইসি) সঙ্গে এসব কোম্পানির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এ চুক্তিকে দুই দেশের কৃষি ও খাদ্য বাণিজ্যে নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন, ইউএসএসইসির নির্বাহী পরিচালক কেভিন এম রোপকে, সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসান, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা এবং ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক।
আমদানিতে নতুন গতি
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। সে হিসাবে মাসে প্রয়োজন দেড় লাখ টন এবং বছরে প্রায় ২৪ লাখ টন। এই চাহিদা মেটাতে দেশীয় শিল্পগোষ্ঠীগুলো প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি করে।
চুক্তি অনুযায়ী, আগামী বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানির পরিমাণ তিনগুণ বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
৩ শিল্প গ্রুপের প্রত্যাশা
সিটি গ্রুপের এমডি মো. হাসান বলেন, আমরা গুণগত মান ও টেকসই সরবরাহব্যবস্থায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উচ্চমানের মার্কিন সয়াবিনের ব্যবহারে ভোক্তারা উন্নতমানের পণ্য পাবেন এবং দেশের প্রোটিন ঘাটতি পূরণেও সহায়ক হবে।
ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্যের মান সব সময়ই বিশ্বমানের। সয়াবিন আমদানির পাশাপাশি আমরা এলপিজি ও অপরিশোধিত তেল আমদানিরও পরিকল্পনা করছি, যা দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সাহায্য করবে।
মেঘনা গ্রুপের পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০ লাখ টন সয়াবিন আমদানির লক্ষ্য নিয়েছি, যা আমাদের খাদ্য ও পশুখাদ্য সরবরাহব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি
ইউএসএসইসির নির্বাহী পরিচালক কেভিন এম রোপকে বলেন, বাংলাদেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন রপ্তানির একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। আমরা বিশ্বাস করি, এই অংশীদারত্ব দীর্ঘমেয়াদে আরও বিস্তৃত হবে।
ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ট্রেসি জ্যাকবসন বলেন, বাংলাদেশে বাণিজ্য বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ ধরনের অংশীদারত্ব দুই দেশের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।
ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। এতে তুলনামূলক কম দামে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনার সুযোগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের আমদানিকারকদের জন্য।
চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন