- দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত, জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে
- স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ
- প্রশাসনের দাবি, বিকল্প বর্জ্য ফেলার জায়গা চিহ্নিত করার কাজ চলছে
নরসিংদী জেলার মনোহরদী পৌরসভার মনোহরদী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ঢাকা-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের ওপর গড়ে উঠেছে বিশাল ময়লার ভাগাড়। প্রায় পাহাড়সম এই বর্জ্যরে স্তূপ এখন পৌরবাসীর জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্গন্ধে চারদিকের বাতাস দূষিত হচ্ছে, বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য।
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত মনোহরদী পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে প্রায় ২১ হাজার মানুষের বসবাস। প্রতিদিন পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে এবং পাশের কয়েকটি এলাকা থেকেও বর্জ্য ট্রাক ও ভ্যানে করে এনে এই মহাসড়কের পাশেই ফেলা হচ্ছে। এতে পুরো এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মহাসড়কের ওপর এমন একটি বর্জ্য ভাগাড় থাকা শুধু অস্বাস্থ্যকরই নয়, বরং এটি পুরো পৌরসভার সৌন্দর্য ও ভাবমূর্তিও নষ্ট করছে।
সরেজমিন দেখা যায়, মহাসড়কের ওপর ছড়িয়ে আছে পচা সবজি, পলিথিন, নোংরা কাপড়, এমনকি মৃত গরু-ছাগল ও হাসপাতালের বর্জ্যও। এসব থেকে নির্গত দুর্গন্ধে আশপাশের পরিবেশ অসহনীয় হয়ে পড়েছে। সকাল-বিকেলে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষের চলাচলের সময় গন্ধের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়।
পথচারী রোমান মিয়া বলেন, ‘এই মহাসড়ক দিয়ে এখন যাতায়াত করাই বিপজ্জনক। কুকুর-শিয়ালের ভিড়ে গাড়ি চালানো কষ্টকর হয়ে যায়, দুর্গন্ধে নাক-মুখ চেপে ধরতে হয়।’
অটোরিকশাচালক নুর মোহাম্মদ অভিযোগ করেন, ‘দিন-রাত কুকুর, কাক আর শিয়ালের উপদ্রবে রাস্তা চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। রাতের বেলায় দুর্ঘটনাও ঘটে প্রায়ই।’
স্থানীয়দের দাবি, ময়লার রস ও পচা বর্জ্যরে পানিতে আশপাশের জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। মহাসড়ক থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ। পৌরবাসীর মতো, নদীর পাড়ে ফাঁকা জায়গায় একটি নির্দিষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে এই সংকট কিছুটা লাঘব হতে পারে।
কলেজছাত্রী সানিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়েই কলেজে যাই। গন্ধে হাঁটাও কঠিন হয়ে পড়ে। বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে।’
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, জনবসতির কাছাকাছি স্থানে বর্জ্য ফেলা পরিবেশের জন্য গুরুতর হুমকি। এতে শুধু দুর্গন্ধ নয়, ডায়রিয়া, ত্বক ও শ্বাসযন্ত্রের নানা রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।
মনোহরদী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার জাকির হোসেন আকন্দ বাবুল বলেন, ‘ময়লার ভাগাড়ের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’
মনোহরদী পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম এ মুহাইমিন আল জিহান বলেন, ‘পৌরসভার নির্দিষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জায়গা নেই। আপাতত এখানেই বর্জ্য রাখা হচ্ছে। তবে দ্রুতই বিকল্প স্থান চিহ্নিত করে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত এ ময়লার ভাগাড় সরিয়ে একটি সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। নইলে পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও রাস্তার নিরাপত্তা, সব কিছুই বড় সংকটে পড়বে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন