জন্ম থেকেই দুটি পা বিকলাঙ্গ। তবুও থেমে থাকেননি লাইজু। গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার এই নারী আজ জীবন্ত উদাহরণ, কীভাবে শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের মাধ্যমে জয় করা যায়।
শৈশব থেকেই অবহেলা আর কষ্ট ছিল তার জীবনের সঙ্গী। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বিয়ে হয় একই এলাকার সাইকেল মেকার কোনা মিয়ার সঙ্গে। স্বামীর আগের স্ত্রীর রেখে যাওয়া চার শিশুর দায়িত্বও নিতে হয় লাইজুকে। প্রতিবন্ধী শরীর, চার সন্তানের লালন-পালন, সংসারের ভার, সবকিছু যেন জীবনের এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।
কিন্তু লাইজু হার মানেননি। নব্বইয়ের দশকের শেষভাগে জয়পুরহাটের সীমান্তবর্তী বাগজানা এলাকায় ছোট্ট এক ঝুপড়ি ঘরে নতুনভাবে গড়ে তোলেন সংসার। স্বামীর সাইকেল মেরামতের সামান্য আয় সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। তাই লাইজু নিজেই এগিয়ে আসেন, রিকশা ও ভ্যানে চড়ে গ্রামেগঞ্জে ঘুরে ঘুরে লবণ, চিনি, কসমেটিকস, শাড়ি ও ছিট কাপড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন।
শারীরিক কষ্ট, সমাজের অবহেলা আর দারিদ্র্যের দেয়াল ভেদ করে তিনি ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান তৈরি করেন। সংসারে আসে আরও দুই সন্তান। সীমিত আয়ের মধ্যেও সন্তানদের মানুষ করেছেন, তাদের বিয়ে দিয়েছেন।
২০১৬ সালে স্বামী কোনা মিয়ার মৃত্যু লাইজুর জীবনে এক নতুন শূন্যতা এনে দেয়। কিন্তু তিনি থেমে যাননি। স্বামীর সামান্য সঞ্চয় আর নিজের জমানো টাকায় কেনা কয়েক শতক জমি সন্তানদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দেন।
আজও লাইজু পরিশ্রম করে চলেছেন। জয়পুরহাটের আটাপাড়া বেলি ব্রিজের নিচে ছোট্ট একটি টং দোকান চালান তিনি। সম্প্রতি একজন শুভাকাক্সক্ষীর সহায়তায় পেয়েছেন একটি হুইলচেয়ার। বর্তমানে সতীনের ছেলের ঘরেই বাস করেন, যেখানে তাকে মায়ের মতো ভালোবাসা দেওয়া হয়।
লাইজু হয়তো খ্যাতি পাননি, আলোচনায় আসেননি। কিন্তু তার জীবনই যেন এক জীবন্ত প্রেরণার গল্প, যা শেখায়, অদম্য মনোবল থাকলে কোনো বাধাই অতিক্রম করা অসম্ভব নয়।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন