ঢাকা রবিবার, ০৯ নভেম্বর, ২০২৫

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

চিকিৎসক-জনবল সংকটে ব্যাহত সেবা

সাইফুল ইসলাম, ভেড়ামারা
প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২৫, ০১:২৬ এএম

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনিয়ম ও সংকট যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বিশেষ করে হাসপাতালের পদ অনুযায়ী চিকিৎসক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জনবল নেই। ফলে সীমিত জনবল নিয়েই চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, এতে করে দুর্ভোগ বাড়ছে রোগীদের এবং অনেক ক্ষেত্রে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীদের দূরে যেতে হচ্ছে।

জানা যায়, ভেড়ামারা উপজেলার প্রায় ৩ লক্ষাধিক জনগণ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দৌলতপুর ও মিরপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের লোকজন এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে থাকেন। তা ছাড়াও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অধিকাংশ সময়ে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নেন।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতালটিতে ২৫ জনের বিপরীতে মাত্র চার-পাঁচজন চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ চিকিৎসক প্রেষণে অথবা উচ্চতর প্রশিক্ষণে রয়েছেন। আবার যে কয়জন চিকিৎসক রয়েছেন তাদের বেশ কয়েকজন কুষ্টিয়া শহরে অবস্থান করেন। ফলে চিকিৎসা সেবায় বিঘœ ঘটছে।

সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ, হাসপাতালে চিকিৎসকদের অনিয়ম ও অবহেলার কারণে সঠিক চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না রোগীদের। দৈনিক ওষুধ সরবরাহের তালিকায় রোগীদের ওষুধ দেওয়ার বিধান থাকলেও তেমন কোনো ওষুধই দেওয়া হয় না।

সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে রোগী সিটে থাকলেও অধিকাংশ চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা অনুপস্থিত। বেলা যত বাড়তে থাকে চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা আসতে থাকেন। বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। এমনকি চার-পাঁচ মাসের শিশুদের কোলে নিয়ে সেবা পাওয়ার আশায় বসে আছেন মায়েরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থো-সার্জারি) ও ৩ জন মেডিকেল অফিসার থাকলেও জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী), জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেসথেসিয়া) জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু) জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্টের (চর্ম ও যৌন) পদ খালি রয়েছে। ৩ জন মেডিকেল অফিসার পদে কর্মরত দেখালেও মেডিকেল অফিসার পলাশ চন্দ্র দেবনাথ (কোড নং- ১৩১৯০০) গত ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তবে নির্ভরযোগ্য সূত বলছে, তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। এ ছাড়াও আইএমও (এনসথেটস্ট), এম.ও (এ.এমসি) এর পদ খালি রয়েছে।

এদিকে ১ জন মিডওয়াইফ, ১ জন জুনিয়র নার্স, ১ জন একাউন্টেন্ট, ১ জন ক্যাশিয়ার, ৩ জন অফিস সহকারী, ১ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিন), ১ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই), ২ জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ১২ জন স্বাস্থ্য সহকারী, ১ জন কম্পাউন্ডার, ১ জন অফিস সহায়ক, ৩ জন ওয়ার্ড বয়, ২ জন আয়া, ২ জন কুক, ১ জন মালি, ১ জন নিরাপত্তার প্রহরী, ৩ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ২ জন অফিস সহায়কের পদ শূন্য রয়েছে।

তা ছাড়াও হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ ও প্রসূতি সেবাও ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন বিকল, প্রয়োজনীয় ল্যাব টেস্টও করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে রোগীরা বাধ্য হয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল বা বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে ছুটে যাচ্ছেন। চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালে সনোগ্রাফিও বন্ধ রয়েছে।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালের আঙ্গিনা অত্যন্ত নোংরা এবং অস্বাস্থ্যকর। হাসপাতলে কোন রোগীর সঙ্গে কেউ আসলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তিনিও অসুস্থ  হয়ে যান। শিডিউল অনুসারে রোগীদের খাবার দেওয়া হয় না।

চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলা বাহাদুরপুর গ্রামের আসাদর রহমান নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার শিশু সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। চিকিৎসক ওষুধ লিখে দিলেও এখান থেকে কোনো ওষুধ পাচ্ছি না। হাসপাতালে খাবার-দাবারের মানও ভালো না। চিকিৎসকরা ঠিক মতো আসেন না রোগীর কাছে। নার্স ও আয়ারাও ভালো ব্যবহার করেন না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, হাসপাতালে ব্যাপক চিকিৎসক ও জনবল সংকট রয়েছে। একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কার্যালয়ে আবেদন করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি। তারমধ্যেও অত্যন্ত কম সংখ্যক জনবল দিয়েও বিশাল এলাকার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি পরিদর্শন করেছি। জনবল ও চিকিৎসক সংকট রয়েছে। তার মধ্যেও সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। হাসপাতালের ও স্টাফদের অনিয়ম এবং দুর্ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, হাসপাতালের অনিয়মের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।