রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিষমিশ্রিত ধান খেয়ে ৩৩৫ হাঁসের মৃত্যু

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ০১:১৩ এএম

বিষমিশ্রিত ধান খেয়ে  ৩৩৫ হাঁসের মৃত্যু

মৌলভীবাজারের জুড়ীর জায়ফরনগর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে এক খামারির জীবনে নেমে এসেছে হৃদয়বিদারক বিপর্যয়। বিষমিশ্রিত ধান খেয়ে মুহূর্তেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তাঁর খামারের ৩৩৫টি হাঁস। যে হাঁসগুলোকে সন্তানস্নেহে বড় করে তুলেছিলেন, সেগুলোর নিথর দেহ জমির পানিতে ভাসতে দেখে ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ খামারি চেরাগ আলী। কাঁপা কণ্ঠে তিনি বলেন, এই হাঁসগুলা ছাড়া আমার আর কিছু নাই। এরা আমার বাঁচার আশা ছিল। এভাবে সব শেষ হইয়া যাইব কখনো ভাবলাম না।

চেরাগ আলীর বয়স ৬৫। প্রায় ১৪ বছর ধরে বড় পরিশ্রমে তিনি এই হাঁসগুলো পালন করতেন। তাঁর খামারে দেশি প্রজাতির প্রায় ৫০০ হাঁস ছিল, অনেকটি নিয়মিত ডিম দিত, আর কিছু ছিল নতুন ডিম পাড়ার অপেক্ষায়। গত বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিদিনের মতো তিনি হাঁসগুলোকে গ্রামের পাশের জলাবদ্ধ স্থানে ছেড়ে দিয়ে দূরে কৃষিকাজে যান। কিন্তু বিকেলে বাড়ি ফেরার পথেই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক দৃশ্য অপেক্ষা করছিল পানিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে শত শত হাঁসের নিথর দেহ।

স্থানীয়দের মতে, এলাকাটি ‘গোবিন্দপুরের জাওর’ নামে পরিচিত, যেখানে শুষ্ক মৌসুমে মাছ ধরার জন্য পানি আটকে ইজারা দেওয়া হয়। এ বছর জলাশয়টি ইজারা নিয়েছেন স্থানীয় মফিজ আলীসহ কয়েকজন। চেরাগ আলীর সন্দেহ, জমির ধারে ছড়ানো ধানই তার হাঁসগুলোর মৃত্যুর কারণ। সেই ধানেই মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিষ।

অন্ধকার নেমে আসায় সেদিন সব হাঁস উদ্ধার করা যায়নি। বাড়িতে ফিরিয়ে আনার পর আরও কয়েকটি হাঁস ছটফট করতে করতে প্রাণ হারায়। চোখ ভেজা অবস্থায় তিনি জানান, অসুস্থ হাঁসগুলোকে তেঁতুলের রস খাইয়ে প্রাণে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেননি।

চেরাগ আলীর ভাষায়, তার ক্ষতির পরিমাণ শুধু টাকা, পয়সার হিসাব নয়, বরং দীর্ঘ দিনের পরিশ্রম, স্বপ্ন আর আশার সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া। তিনি বলেন, এই বয়সে আবার কেমনে শুরু করমু? এতদিন সঞ্চয় করে যে হাঁসগুলা লইছিলাম, একদিনেই সব শেষ। তিনি জুড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন, ঘটনাটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, ইচ্ছাকৃতভাবেই হাঁস নিধনের উদ্দেশ্যে বিষ ছড়ানো হয়েছে। ফয়জুর রহমান ও আবদুস সামাদ বলেন, শীত এলেও এই জাওরে পরিযায়ী পাখি থাকে না। নিশ্চয়ই কোনো শত্রুতা থেকেই বিষ দেওয়া হয়েছে। এমন নির্মমতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অন্যদিকে, ইজারাদার মফিজ আলী দাবি করেছেন, তারা ঘটনাটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না।

জুড়ী থানার ওসি মো. মুরশেদুল আলম ভূঁইয়া বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গোবিন্দপুরের বাতাসে এখন শুধুই এক বৃদ্ধ খামারির কান্না, শোক আর অসহায়তার দীর্ঘশ্বাস। ৩৩৫ হাঁসের নিথর দেহ যেন এক মুহূর্তে কেড়ে নিয়েছে তার জীবিকার শেষ সম্বল, শেষ আস্থা আর শেষ ভরসাটুকুও।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!