ঢাকা সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

অযত্নে নষ্ট রেসকিউ বোট

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ০১:৩৭ এএম
  • বন্যার পর রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই
  • ছাউনি ছেঁড়া, মরিচা আর ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে
  • বরাদ্দ না পাওয়া ও ডিজাইন সমস্যাকে দায় বলছে প্রশাসন

সুনামগঞ্জ জেলার হাওড়বেষ্টিত দুর্গম এলাকায় বন্যা ও দুর্যোগের সময় ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্মিত প্রায় অর্ধকোটি টাকার রেসকিউ বোট ‘টাঙ্গুয়া-সুনামগঞ্জ-১’ অযতœ-অবহেলায় পড়ে থেকে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। বৌলাই নদীর পাড়ে তাহিরপুর থানা ঘাটে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বোটটি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ২০২১ ও ২০২২ সালে হাওড় ও উপকূলীয় জেলাগুলোর জন্য মোট ৬০টি রেসকিউ বোট নির্মাণ করে। এর মধ্যে ২০২২ সালে সুনামগঞ্জ জেলায় দুটি বোট হস্তান্তর করা হয়, একটি তাহিরপুরে ও একটি সুনামগঞ্জ সদরে। সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার সময় এই বোটটি ত্রাণ বিতরণ ও বন্যার্তদের উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ পরিবহনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে এটি নির্ভরযোগ্য বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কিন্তু বন্যা শেষে বোটটির সংরক্ষণ বা রক্ষণাবেক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সরেজমিন দেখা গেছে, বোটটির ছাউনি ছিঁড়ে গেছে, বিভিন্ন অংশে মরিচা ধরেছে, ইঞ্জিনও প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। শুকনো মৌসুমে মাটিতে পড়ে থাকা এবং বর্ষায় পানিতে অযতেœ ভাসতে থাকার কারণে এখন কাঠামো ও যন্ত্রাংশ দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের রতনশ্রী গ্রামের বাসিন্দা বাবলু মিয়া বলেন, ‘কয়েক বছরের মধ্যেই এত দামি বোটটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একটু যতœ নিলেও বা মাঝে মাঝে ব্যবহার করলেও রাষ্ট্রীয় সম্পদ এভাবে নষ্ট হতো না।’

থানা ঘাটের স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘বোটটা অনেক দিন ধরে এভাবেই পড়ে আছে। কখনো শুকনো নদীতে, আবার কখনো পানিতে ভাসছে।’

হাওর বাঁচাও আন্দোলন তাহিরপুর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তুজাম্মিল হক নাছরুল বলেন, ‘তাহিরপুর হাওড়প্রধান এলাকা। প্রতি বছর বন্যার ঝুঁকি থাকে। এমন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পদের প্রতি উদাসীনতা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য।’

তাহিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মুহিবুর রহমান জানান, রেসকিউ বোটটি হস্তান্তরের পর থেকে এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান মানিক বলেন, ‘বোটটির পেছনের অংশের উচ্চতা বেশি হওয়ায় নদীতে সহজে চলতে পারে না, ব্রিজে লেগে যায়। জ্বালানি ব্যয়ও অনেক বেশি। তবে আমরা দ্রুত এটি সংস্কার ও চলাচল উপযোগী করার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মন্ত্রণালয়কে জানাব।’