ময়মনসিংহ নগরীতে দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে মশার উপদ্রব। এতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় বেদেনা নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৪ জন ডেঙ্গু রোগী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এরমধ্যে ৪৯ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী, সাতজন শিশু রয়েছে। জানুয়ারি থেকে গত এক বছরে ২ হাজার ১৩৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ২৪টি শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এই হাসপাতালে ২৪টি শয্যার বিপরীতে প্রতিদিনই প্রায় তিনগুণ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নগরবাসীর অভিযোগ, ময়মনসিংহ সিটি কপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম যথেষ্ট নয়। নিয়মিত ফগার মেশিন চালানো বা লার্ভা ধ্বংসে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত ঘরে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। দিনের বেলাতেও দেখা যাচ্ছে মশার উপদ্রব। বাসা-বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত সব জায়গাতেই মশার উৎপাত বেড়েই চলেছে।
নগরের ভাটিকাশর এলাকার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যার পর ঘরে বসে থাকা দায়। কয়েল, স্প্রে, ব্যাট কিছুতেই কাজ হয় না। শিশুরা ঘুমাতে পারে না, সকালে স্কুলে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
বড়বাজার এলাকার বাসিন্দা গৌতম পোদ্দার বলেন, আমার ছেলে শ্যামা পূজার আগে বিদেশ থেকে এসেছে। এখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। হাসপাতালে জায়গা না থাকায় বাড়িতেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
কালিবাড়ী এলাকার গৃহিণী মীম আক্তার বলেন, ড্রেন, খাল ও আবর্জনার স্তূপ মশার প্রজননস্থলে পরিণত হয়েছে। সিটি করপোরেশনের ফগার মেশিনের ধোঁয়াও তেমন কাজে আসছে না।
হাদিম উদ্দিন রোডের বাসিন্দা আনোয়ার বাবু বলেন, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর মশার উৎপাত অসহনীয় হয়ে পড়ে। ডেঙ্গুর ভয় আমাদের দিন-রাতের শান্তি কেড়ে নিয়েছে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ দরকার।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মশক নিধনে দেড় কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। যার মধ্যে ৫০ লাখ টাকা ইতোমধ্যে ব্যয় করা হয়েছে। মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ জনসচেতনতা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ড্রেন পরিষ্কার, কাদা-ময়লা অপসারণ এবং ঝোপঝাড় পরিষ্কারের কাজও চলমান।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলেন, সিটি করপোরেশন মশা নিধনে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। তবে জনগণের সচেতনতা ছাড়া এই পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়।
সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এইচ. কে. দেবনাথ বলেন, বাড়ির ছাদে বা টবে পানি জমে থাকলে তা পরিষ্কার করতে হবে। মশার প্রজনন বন্ধে নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রম নিয়মিত চলছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. জাকিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। চিকিৎসক ও নার্সরা আন্তরিকতার সঙ্গে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।

