- উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার অবহেলায় চাল বিতরণ শুরু হয়নি
- তালিকা পরিবর্তন ও নতুন সুবিধাভোগী অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা
- গরিব সুবিধাভোগীরা ইউনিয়ন পরিষদে এসে হতাশ হয়ে ফিরছেন
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কার্যক্রমের সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ করা প্রায় ১০ হাজার বস্তা চাল চার মাস ধরে উপজেলা খাদ্যগুদামে পড়ে আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বারবার নির্দেশনা সত্ত্বেও এ চাল বিতরণ না করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিকের বিরুদ্ধে। ফলে একদিকে সুবিধাভোগী নারীরা প্রতিনিয়ত ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরছেন, অন্যদিকে গুদামে অতিরিক্ত মজুতের কারণে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও চাপের মুখে পড়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ইউএনও চূড়ান্ত করা তালিকা পরিবর্তন করে অন্য সুবিধাভোগীদের অন্তর্ভুক্ত করারও চেষ্টা করেছেন মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা। এতে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সুবিধাভোগী, ইউপি সচিব ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে উপজেলার আটটি ইউনিয়নে লটারির মাধ্যমে ২ হাজার ৪৫৮ জন সুবিধাভোগীর তালিকা প্রস্তুত ও চূড়ান্ত করা হয়। তখনকার ইউএনও পলাশ কুমার দেবনাথ বদলি হয়ে যাওয়ার পর নতুন ইউএনও মফিজুর রহমান চাল বিতরণের অনুমোদন ও ডিও প্রদান করেন। কিন্তু চার মাস অতিক্রম হলেও চাল বিতরণ শুরু হয়নি। চালগুলো এখনো গুদামেই পড়ে আছে।
অভিযোগ উঠেছে, নতুন ইউএনও কয়েক দফায় নির্দেশ দেওয়ার পরও মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা চাল বিতরণে উদ্যোগ নেননি। বরং আগের ইউএনওর চূড়ান্ত করা তালিকা থেকে প্রায় ২৫০ জনের নাম বাদ দিয়ে নতুন তালিকায় স্বাক্ষর করানোর চেষ্টা করেন তিনি। ইউএনও এতে রাজি না হয়ে আগের তালিকা অনুযায়ী চাল বিতরণের নির্দেশ দেন।
এদিকে লটারিতে নাম উঠেও সুবিধা থেকে বাদ পড়ার ঘটনায় দুওসুও, ধনতলা ও চাড়োল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবরা এক মাস আগে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। তবে অভিযোগের বিষয়ে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা।
ইউপি সচিব ও চেয়ারম্যানরা জানান, লটারিতে নির্বাচিত সুবিধাভোগীরা প্রতিদিন ইউনিয়ন পরিষদে এসে জানতে চাইছেন কখন চাল পাওয়া যাবে, কিন্তু মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তর থেকে কোনো নির্দেশনা না আসায় তাদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।
বালিয়াডাঙ্গী খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা শাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, ‘ভিডব্লিউবি কার্যক্রমের আওতায় জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসের ৩০ কেজির মোট ৯ হাজার ৮৩২ বস্তা চাল গুদামে পড়ে আছে। বারবার বলার পরও মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা বিতরণের উদ্যোগ নিচ্ছেন না। নভেম্বরে নতুন মাসের চালও চলে আসবে। গরিবের চাল আটকে রাখা ঠিক হয়নি। আমরাও কিছু করতে পারছি না।’
তালিকা পরিবর্তনের বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিক বলেন, ‘নতুন তালিকায় স্বাক্ষর হলে চাল বিতরণ শুরু হবে।’ গরিবের চাল চার মাস ধরে ফেলে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কিছু করার নেই।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন, ‘বিতরণের জন্য আনা চাল গুদামে ফেলে রাখার সুযোগ নেই। বারবার বলার পরও তিনি (মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা) চাল বিতরণ করেননি।’ সুবিধাভোগী কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবেন বলেও জানান তিনি।
বদলি হওয়া ইউএনও পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন, ‘সুবিধাভোগীদের তালিকায় পূর্বের তারিখ দিয়ে স্বাক্ষর করার প্রশ্নই ওঠে না। লটারিতে যাদের নাম উঠেছে, তারাই চাল পাওয়ার যোগ্য।’
২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় যোগদান করেন মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিক। যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনায় একাধিকবার আলোচনায় আসেন তিনি। গত আট বছরে সাতজন ইউএনও বদলি হলেও তিনি একই পদে রয়েছেন এবং একই সঙ্গে রাণীশংকৈল উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করছেন।

