একটি সেতুর জন্য অপেক্ষা করছেন গত ৫৬ বছর ধরে। নদীর দুপাড়ের বাসিন্দারা এক হওয়ার আশায় দিন গুনছেন দিনের পর দিন। তবুও অপেক্ষার শেষ হয়নি সিলেটের বালাগঞ্জবাসীর। প্রতিশ্রুতি শুনেছেন বছরের পর বছর ধরে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি কেউই রক্ষা করেননি। স্বপ্ন তাদের স্বপ্নই থেকে গেছে। বালাগঞ্জবাসী থেকে গেছেন সেতু বঞ্চিত।
তবে এবার তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। বালাগঞ্জ উপজেলা সদরের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের যোগাযোগব্যবস্থার বড়ভাঙ্গা নদীর ওপর দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে সেতু নির্মাণকাজ অবশেষে শুরু হয়েছে। এলাকাবাসীর মুখে এখন একটাই কথা ‘যা দেখলাম, এটা সত্যিই স্বপ্নপূরণ।’ স্বাধীনতার পর থেকেই স্থানীয় মানুষের দাবি ছিল একটি স্থায়ী সেতু। কারণ প্রতিদিন হাজারো মানুষ, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও রোগীকে নৌকা কিংবা ভাঙাচোরা কাঠের সাঁকো দিয়ে পার হতে হতো। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বেড়ে গেলে চলাচল অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। অনেক সময় চিকিৎসার জন্য রোগী নিয়ে যেতে গিয়ে নৌকা পারাপারের সময় জীবনহানির মতো ঝুঁকি তৈরি করত। এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠরা জানান, প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে বিভিন্ন সময় সেতুর আশ্বাস, একাধিকবার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও বস্তবে কোনো কাজ শুরু হয়নি। প্রতিবারই হতাশা বয়ে আনত। কিন্তু এবার সত্যিকারের কাজ শুরু হওয়ায় তারা এটিকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে দেখছেন।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৮২ হাজার ২৩৮ টাকা ব্যয়ে ১০০ মিটারের এই ঝুলন্ত সেতুর নির্মাণকাজ পায় মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজ (জেবি) নামক ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রকল্পের আওতায় আধুনিক নকশায় সেতুটি নির্মাণকাজ ১৮ মাসের মধ্যে কাজ করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা পাইলিংয়ের জন্য নদীর তীরে ভারী যন্ত্রপাতি স্থাপন করে কাজ শুরু করেছেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার সন্দ্বিপ রায় জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেতুর কাজ শেষ করতে তারা সর্বোচ্চ গতি বজায় রাখছেন। সরকারি দপ্তরের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ধাপ নিয়ম মেনে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
উন্নয়নের নতুন দিগন্ত খুলবে সেতু : এই সেতু নির্মিত হলে বালাগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা সদর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি দপ্তর ও বাজারগুলোর যোগাযোগ হবে অনেক সহজ। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, কৃষিপণ্য কম খরচে পরিবহন করা যাবে, স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সহজ হবে, সব মিলিয়ে এলাকার অর্থনৈতিক চিত্র বদলে যাবে বলে মনে করছেন উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা। স্থানীয় তরুণ সমাজ বলছে, ‘এই সেতু শুধু আমাদের চলাচলই সহজ করবে না, চাকরির সুযোগ, ব্যবসার প্রসারÑ সবকিছুর ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
সেতুর কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। প্রতিদিনই বহু মানুষ নির্মাণস্থলে গিয়ে কাজের অগ্রগতি দেখছেন। অনেকে নিজের হাতে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করছেন।
শিরিয় গ্রামের প্রবীণ কুটি মিয়া বলেন, ‘জীবনে অনেক প্রতিশ্রুতি শুনেছি। কিন্তু আজ নিজের চোখে সেতুর পাইলিংয়ের প্রস্তুতি দেখে মনে হচ্ছে, সত্যিই আমাদের সুখের সময় এসেছে।’
উপজেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেনÑ ‘এটি বালাগঞ্জের জন্য যুগান্তকারী প্রকল্প। মান বজায় রেখে সেতুটি সময়মতো নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্প সমাপ্ত হলে বালাগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তন আসবে।’

