চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার মাঠগুলো এখন সোনালি রঙে ছেয়ে আছে। হেমন্তের মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকেই পুরো উপজেলায় শুরু হয়েছে আমন ধান কাটা, যা নতুন ধানের আগমনে প্রতিটি কৃষক পরিবারের ঘরে আনন্দের ঢেউ ছড়াচ্ছে। শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে গ্রামে শুরু হয়েছে নবান্নের প্রস্তুতি। ধান কাটাকে কেন্দ্র করে আত্মীয়-স্বজন বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন। পিঠাপুলি খাওয়ানোসহ নবান্নের আনন্দ ভাগাভাগি করা এখন গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী রীতি।
সরেজমিনে আনোয়ারার বৈরাগ, বটতলী, বারশত, বরুমচড়া ও চাতরীসহ বিভিন্ন গ্রামে দেখা যায়, কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন ধান কাটায়। কেউ ধান কেটে আঁটি বানাচ্ছেন, কেউ বা সেই আঁটি বাড়ির উঠানে নিয়ে যাচ্ছেন। মাঠের পাশেই ধানের খোলায় চলছে মাড়াইয়ের কাজ। বাতাসে ভেসে আসছে পাকা ধানের গন্ধ, আর কৃষকের আঙিনায় চলছে সোনালি ফসল ঘরে তোলার ধুম।
গুয়াপঞ্চক গ্রামের কৃষক আব্দুল করিম বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এবার ধানের আবাদ ভালো হয়েছে। তবে শ্রমিকদের খরচ কিছুটা বেশি হওয়ায় খরচ বেড়েছে।’
বরুমচড়া এলাকার কৃষক মনির আহমদ যোগ করেন, ‘আমরা অনেক কষ্টে ফসল ফলাই, কিন্তু বাজারে যথাযথ দাম পাই না। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, যেন ন্যায্যমূল্যে ধান ক্রয় করা হয়। তাহলেই কৃষকদের উৎসাহ বাড়বে, নতুবা এই পেশা থেকে কৃষকরা ধীরে ধীরে আগ্রহ হারাবে।’
আনোয়ারা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা ছিল, কিন্তু বাস্তবে ক্ষতি সামান্য। এ বছর সাত হাজার পাঁচশ সাতান্ন হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়েছে। বিশেষ করে ব্রি-৪৯ ও ব্রি-১০৩ জাতের ধানের ফলন বেশি হয়েছে।
উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সরওয়ার আলম বলেন, ‘ফলন অত্যন্ত ভালো হয়েছে। তবে বোরো মৌসুমের জন্য কৃষকরা দেরিতে রোপণ শুরু করেন। আমাদের পরামর্শ, তারা আগাম প্রস্তুতি নিন।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীম আহমদ সরকার যোগ করেন, ‘আমন ধানের ফলন আশানুরূপ হয়েছে। কৃষকদের উৎসাহিত করতে প্রণোদনার প্যাকেজ পৌঁছে দিচ্ছি। শুষ্ক মৌসুমে সরিষা, ভুট্টা, চীনাবাদামসহ বিভিন্ন সবজি বীজ প্রদান করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে যাতে কৃষকরা সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেন।’
মাঠভরা ধান আর কৃষকের স্বপ্ন- সব মিলিয়ে আনোয়ারায় এখন বিরাজ করছে অনাবিল প্রশান্তি। শ্রমিক মজুরি বা ধানের দাম নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও, নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দই প্রধান হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের কৃষকদের কাছে।

