- শূকরের হানায় পাকা ধান-সবজির ব্যাপক ক্ষতি
- টিন-প্লাস্টিক বাজিয়ে রাতভর ফসল পাহারা দিচ্ছেন
- কৃষকেরা বলছেন, শূকর মানুষকেও ধাওয়া করে
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের লংগুরপার, দক্ষিণ বালিগাঁও, বাঘমারা, সরইবাড়ি, ভেড়াছড়া ও ছাতকছড়া এলাকায় এক মাস ধরে বুনো শূকরের তা-বে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষকেরা। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসংলগ্ন এসব গ্রামে রাত নামলেই ধান ও সবজির জমিতে নেমে আসে শূকরের বড় দল। পাকা ধান, আলু, মুলা থেকে শুরু করে কলাগাছ পর্যন্ত উপড়ে ফেলছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা জানান, সন্ধ্যা হলেই ১০-১৫টির দল বন্য শূকর তাদের আবাদি ফসলে হানা দেয়। বছরে একবারের ফসল মুহূর্তেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা রাত জেগে জমিতে পাহারা দিচ্ছেন। বাঁশের ওপর ৬ ফুট উঁচু মাচা বানিয়ে টিন ও প্লাস্টিকের ড্রাম বাজিয়ে শূকর তাড়ানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা।
লংগুরপার এলাকার কৃষক মফিজ মিয়া বলেন, ‘শূকর আমাদের সব ফসল নষ্ট করে দিচ্ছে। মানুষকেও ধাওয়া করে। তাই মাচায় উঠে রাতভর পাহারা দিই। শব্দ না করলে ওরা যায় না।’ কৃষক কনাই মিয়া, আবুল মিয়া ও আশিক মিয়াও একইভাবে রাত কাটাচ্ছেন মাঠে।
কমলগঞ্জের বাগবাড়ি এলাকার কৃষক সুফি মিয়া বলেন, ‘একসঙ্গে ১০-১৫টা শূকর নামে। দেখে ভয় লাগে। সন্ধ্যা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত কয়েক দফায় হানা দেয়। পাহারা না দিলে সব ধান শেষ করে দিত।’
পরিবেশবাদী সংগঠন জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি কমলগঞ্জের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. সালাহউদ্দিন শুভ অভিযোগ করেন, বন উজাড় এবং বনভূমি বেদখলের কারণে বন্য প্রাণী খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকছে। ‘আগে এমন হানা ছিল না। বেদখল হওয়া বনভূমি উদ্ধার করে বন্য প্রাণীর জন্য বনজ গাছ লাগাতে হবে।’
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার বন্য প্রাণী রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক জামিল মোহাম্মদ খান বলেন, বন্য প্রাণীর বাসস্থান নির্দিষ্ট নয়; খাদ্যের প্রয়োজনে তারা লোকালয়ে যেতে পারে। ‘লাউয়াছড়ায় বুনো শূকরের বংশবিস্তার আগের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। ফসল নষ্ট হওয়া দুঃখজনক। তবে শূকর হত্যা দ-নীয় অপরাধ। কেউ যেন প্রাণী মারতে ফাঁদ ব্যবহার না করেন; করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কৃষকেরা দাবি করছেন, বুনো শূকরের আক্রমণ ঠেকাতে এখনো কোনো সরকারি উদ্যোগ নেই। ফসল কাটার মৌসুম পর্যন্ত তাঁদের রাতজাগা পাহারা অব্যাহত থাকবে।

