*** বাগেরহাটের টমেটো চাষিদের আর্তনাদ
*** অজানা রোগের আক্রমণে মরে যাচ্ছে গাছ
বাগেরহাটে টমেটোগাছে অজানা রোগের আক্রমণে দিশেহারা কৃষকরা। মাঠে নেমে সমস্যা শনাক্তকরণ ও পরামর্শ প্রদানে কৃষি অফিসের উদাসীনতার অভিযোগে ফুঁসছেন চাষিরা। এদিকে বাজারে কেমিক্যাল মেশানো টমেটোর দাপটে স্বাভাবিকভাবে উৎপাদিত টমেটোর চাহিদাও কমে গেছে।
চিতলমারী উপজেলায় সরেজমিনে দেখা যায়, টমেটোগাছে অজানা রোগ ছড়িয়ে পড়ায় চাষিরা চরম আতঙ্কে। কয়েকদিনের ব্যবধানে গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে, ফল ঝরে পড়ছে। কৃষকদের অভিযোগ, মাঠের এই সংকট মোকাবিলায় কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের কোনো দৃশ্যমান ভূমিকা নেই। পরিচিত চাষি না হলে খোঁজও নেন না তারা। সারাদিন শ্রম দিয়ে টমেটো চাষে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন কৃষকরা। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই অজানা রোগে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ায় তাদের মাথায় নেমে এসেছে দুশ্চিন্তার পাহাড়। কিছু অসাধু চাষি কেমিক্যাল ও বিভিন্ন মেডিসিন ব্যবহার করে দ্রুত টমেটো পাকিয়ে বাজারে ছাড়ছে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবে উৎপাদিত টমেটোর চাহিদা কমে গেছে। কয়েকদিন আগেও মণপ্রতি দাম ছিল ৩ হাজার থেকে ৩২০০ টাকা, এখন তা নেমে এসেছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। মৌসুমের শুরুতেই এমন দাম কৃষকদের মৌসুমজুড়ে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সুধাংশু মজুমদার নামে কৃষক বলেন, সাধারণ কৃষকদের যেন মানুষই মনে করে না কৃষি অফিস। পরিচিত বা আপন লোক না হলে কৃষি অফিস কখনোই খোঁজ নেয় না খেতে গাছ মরলেও তারা আসে না, পরামর্শ তো দূরের কথা।
বিধান ম-ল বলেন, অজানা রোগ ছড়াচ্ছে, বাজারে কেমিক্যাল মেশানো টমেটোর বন্যা, অথচ কৃষি অফিস নীরব। কৃষি অফিসের উদাসীনতা, দুর্বল নজরদারি ও তদারকির অভাবেই পুরো মৌসুমটাই এখন হুমকির মুখে। প্রথমে যে দাম পেয়েছি এখন তার অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে টমেটো।
টমেটো ব্যাবসায়ী মো. বেল্লাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কাঁচামালের ব্যবসা করছি। টমেটোর বাজার সবসময় ওঠানামা করে। বছরের শুরুতে দাম তিন হাজার থেকে ৩২শ টাকা পর্যন্ত উঠলেও পরে মানসম্মত পণ্যের সংকট দেখা দেয়। কিছু কৃষক দ্রুত পাকানোর জন্য ওষুধ ব্যবহার করায় বাজারে লোকসান হওয়ায় ব্যবসায়ী ও ক্রেতা দু’পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষি অফিস তদারকি করলে এ সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। আমরা মাইকিং করে কৃষকদের কেমিক্যাল ব্যবহার বন্ধ করতে অনুরোধ করেছি।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, এ বছর জেলায় মোট ২ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু চিতলমারী উপজেলায় চাষ হয়েছে ৮৬০ হেক্টর জমিতে। কৃষকদের যে অভিযোগ পাওয়া গেছে তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রতিবছর একই জমিতে ধারাবাহিকভাবে টমেটো চাষ করার ফলে মাটির উর্বরতার পরিবর্তন ও রোগবালাইয়ের চাপ সৃষ্টি হয়, যার কারণে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে বা মারা যেতে পারে। এছাড়া বাজারে আগাম সরবরাহের প্রতিযোগিতায় কেউ কেউ ইথিলিন ব্যবহার করেন, যা টমেটোকে অকাল পাকতে বাধ্য করে।

