*** মাতৃস্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ
*** দূর থেকে মনে হয় ভূতুড়ে পরিত্যক্ত ভবন
*** খসে পড়ছে ভবনের পলেস্তারা, চুরি হয়ে গেছে দরজা-জানালা
*** ভেতরে নেই কোনো চেয়ার-টেবিল, চিকিৎসার সরঞ্জাম
*** সন্ধ্যা হলেই চলে মাদকসেবীদের আড্ডা
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে ৩নং সিংড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রটি এক সময় মাতৃস্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার অন্যতম ভরসাস্থল ছিল। কিন্তু বরাদ্দ সংকট, নজরদারির অভাব, দীর্ঘদিনের অবহেলা ও অনিয়মের কারণে আজ এটি সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রায়, পরিত্যক্ত এবং জনমানবশূন্য ভবনে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ভবনের প্রতিটি দরজা-জানালা ভেঙে পড়েছে বা চুরি হয়ে গেছে। ফ্রেম, কাঠ ও লোহার বেশির ভাগ অংশ নেই। ভাঙা দেয়ালে বড় বড় ফাটল, ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে ইট বেরিয়ে গেছে। ভবনের চারপাশে আগাছার জঙ্গল এমনভাবে উঠেছে যে দূর থেকে ভবনটি পরিত্যক্ত ভূতুড়ে স্থাপনার মতো মনে হয়।
ভবনের ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায়, মেঝেজুড়ে প্লাস্টিক, ছেঁড়া কাগজ, ভাঙা কাঁচ, পশুর বিষ্ঠা, শুকনো পাতা এবং দীর্ঘদিনের জমে থাকা ময়লার আস্তরণ। নেই কোনো চেয়ার, টেবিল, চিকিৎসার সরঞ্জাম। টয়লেটগুলো অকার্যকর, পানির লাইন নষ্ট, কোথাও নেই আলো বা নিরাপত্তা। স্থানীয়রা জানান, রাত নামলেই ভবনটি মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়, যা এলাকায় নতুন ধরনের অশান্তি সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় নারী রাবেয়া খাতুন বলেন, এই ভবনটি চালু থাকলে গর্ভবতী মা, শিশুর চিকিৎসা আর পরিবার পরিকল্পনা সেবা হাতের নাগালেই পেতাম। এখন দূরে উপজেলা হাসপাতালে দৌড়াতে হয়। সাধারণ মানুষের কষ্ট কেউ বুঝে না।
রানীগঞ্জ সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মনোরঞ্জন মোহন্ত ভুট্টু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৩নং সিংড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের এই অবস্থা শুধু একটি পরিত্যক্ত ভবনের গল্প নয়- এটি গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। তিনি আরও বলেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ভবনটি একসময় সম্পূর্ণ ধসে পড়বে, হারিয়ে যাবে জনগণের মূল্যবান একটি সেবাকেন্দ্র।
স্থানীয়রা জানান, পরিত্যক্ত ভবনটি এখন এলাকায় উদ্বেগের নতুন কারণ। ভবনটি ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে, রাতে এখানে অসামাজিক কর্মকা- চলে, পরিবেশদূষণ ও দুর্গন্ধ বাড়ছে, শিশু-কিশোররা ঝুঁকিপূর্ণ অংশে খেলতে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকে। স্থানীয়দের একটাই দাবি, যত দ্রুত সম্ভব ভবনটি সংস্কার করে পুনরায় স্বাস্থ্যসেবা চালু করতে হবে। কারণ এই কেন্দ্র সচল হলে, গর্ভবতী মা, শিশু স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, টিকাদান, সাধারণ প্রাথমিক চিকিৎসা, এসব সেবা আবারও গ্রামাঞ্চলে সহজলভ্য হবে। স্থানীয়দের ভাষ্য, ভবনটি এখন স্বাস্থ্যসেবার কেন্দ্র না হয়ে এলাকাবাসীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্যরে স্তূপ ও অসামাজিক কর্মকা-ের নতুন স্থান।
ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩নং সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন জানান, আমরা বহুবার উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরে ভবন সংস্কারের আবেদন করেছি। কিন্তু পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। ভবনটি এখন পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, উপযুক্ত সংস্কার, আসবাব, জনবল ও সরঞ্জাম পেলে কেন্দ্রটি আবার সচল করা সম্ভব। এলাকাবাসীর জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. সোলায়মান মেহেদী হাসান জানান, আমরা কেন্দ্রটির জরাজীর্ণ অবস্থার ব্যাপারে অবগত। এ ধরনের সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের কাজ মূলত: হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট (এইচইডি) এর মাধ্যমে হয়ে থাকে। তবে বরাদ্দ অনুমোদন ও নতুন জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া সময় সাপেক্ষ। বিষয়টি ইতোমধ্যে তারা অবগত আছেন। আমরাও বারবার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন