সিলেটজুড়ে বিদ্যুৎ প্রিপেইড মিটার গ্রাহকরা গত রোববার (১৩ জুলাই) থেকে এ সমস্যার কথা জানান। এতে এক নজিরবিহীন ভোগান্তির মুখে পড়েছেন নগরবাসী। বিশেষ করে উপশহর, পূর্ব জিন্দাবাজার, বারুতখানা ও পূর্ব শাহী ঈদগাহ এলাকার প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারীরা রিচার্জ করতে পারছেন না। সার্ভার ডাউন থাকায় বিকাশ, নগদ, উপায়, জি-পে কিংবা রকেট কোনো মাধ্যমেই প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে হাজারো পরিবার বিদ্যুৎহীন অবস্থায় গরম, অন্ধকার ও পানি সংকটে দিন কাটাচ্ছেন।
মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাতভর ঘুম নেই, ফ্যান চলে না, মোটরে পানি তোলা যায় না, বাচ্চাদের কষ্ট আর বৃদ্ধদের অসহ্য অবস্থা। বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ করেও মিলছে না কোনো কার্যকর সমাধান।
এদিকে গতকাল সোমবার উপশহর বিদ্যুৎ অফিসে সকাল থেকে ভিড় করেছেন অসংখ্য গ্রাহক। ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। তাদের কোনো রকমের সমাধান দেওয়া হচ্ছে না অফিস থেকে। শুধু মিটার পরিবর্তনের ফরম ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বিদ্যুৎ অফিসে গেলেও মিলছে না সমাধান, বরং ‘নতুন মিটার’ নিতে বলা হচ্ছে। উপশহর এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘রিচার্জ শেষ হয়ে গেছে, গত রোববার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। পানি উঠছে না, ঘরে এক ফোটা পানিও নেই। অফিসে গিয়ে বললাম, তারা বলল নতুন মিটার লাগাতে হবে! পুরাতন মিটার ঠিকঠাক থাকা সত্ত্বেও নতুন কেন লাগাতে হবে? এটা কী ধরনের নীতিহীনতা!’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রিপেইড মিটারের ৭ ও ১৪নং সিরিয়ালের মিটারগুলোতেই সমস্যা হচ্ছে। মিটার পরিবর্তনের পরামর্শ দিচ্ছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।’
এ সমস্যার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২-এর এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, ‘হেক্সিং মিটার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় তারা প্রতিহিংসামূলক আচরণ করছে। হেক্সিং মিটার কোম্পানিটি এত দিন ধরে প্রিপেইড মিটারের সার্ভার ও রিচার্জ সেবা সরবরাহ করত, তাদের সঙ্গে সরকারের চুক্তি নবায়ন করা হয়নি। নতুন একটি কোম্পানিকে (ইনহেমিটার) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুরোনো হেক্সিং মিটার কোম্পানি প্রতিহিংসা হিসেবে সার্ভার একরকম ‘অচল’ করে দিয়েছে।’
তবে বিষয়টি যদিও সরকারিভাবে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি, তবে অভ্যন্তরীণভাবে বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন মহলে আলোচিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
পিডিবি জানায়, পুরাতন মিটারে নানা জটিলতা থাকায় তা চলতি মাস থেকেই তা পরিবর্তনের কাজ শুরু করে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে এরই মধ্যে শনিবার দুপুর থেকে বন্ধ হয়ে যায়, পুরাতন মিটারের রিচার্জ সার্ভার। ফলে নতুন করে রিচার্জ না হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহও। এ অবস্থায় ভুক্তভোগীদের নতুন মিটার দিয়ে আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিকের চেষ্টা চলছে। একসঙ্গে এত মানুষের চাহিদা থাকায় নতুন মিটার স্থাপনে আমাদের কর্মীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে যত দ্রুত সম্ভব নতুন মিটার স্থাপনের কাজ চলছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামছ-ই আরেফিন সার্ভার সমস্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমি সার্ভার সিস্টেমের দায়িত্বে নেই, তাই বিস্তারিত বলতে পারছি না। তবে আশা করছি, দুই দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধান হবে।’
এ বিষয়ে অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি। প্রকৌশলী মো. আবদুল কাদিরের ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
এ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সিলেট মহানগর বিএনপির নেতারাও। দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী জানান, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, বিকেলের মধ্যে সার্ভার সচল করার চেষ্টা চলছে।’
মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এই চরম দুর্যোগে সরকারের অবহেলা জনগণের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। দ্রুত সমাধান না হলে আমরা প্রতিবাদে নামতে বাধ্য হব।’
আপনার মতামত লিখুন :