ঢাকা সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫

দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হারল বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০১:১২ এএম

দক্ষিণ কোরিয়া যে শক্ত প্রতিপক্ষ- সেটি আগেই জানা ছিল। ম্যাচের আগে বাংলাদেশ নারী দলের প্রধান কোচ পিটার বাটলার বলেছিলেন, নারী ফুটবলে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে দক্ষিণ কোরিয়া। আর সেই তুলনায় বাংলাদেশ তাদের ধারেকাছেও নেই।

নারী ফুটবলে এশিয়ার শীর্ষ দলগুলোর একটি কোরিয়া। মাঠের লড়াইয়েও পার্থক্য বুঝিয়ে দিল দলটি। গতকাল এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ৬-১ গোলে হারল বাংলাদেশের মেয়েরা। এর আগে লাওসকে ৩-১ গোলে হারায় তারা। তিমুর লেস্তের বিপক্ষে ৮-০ গোলে জিতেছিল লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। এর আগে ঘরের মাঠে অনূর্ধ্ব-২০ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সব ম্যাচ জিতে (৬টি) শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। টানা ৮ ম্যাচে জয় পাওয়া বাংলাদেশকে হারের স্বাদ দিল কোরিয়ানরা।

নিউ লাওস ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে খেলার প্রথমার্ধে দক্ষিণ কোরিয়ার চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছে বাংলাদেশ নারী দল। শুরুতে এগিয়েও যায় তারা। কিন্তু গোল হজম করলেও ১-১ সমতায় ফিরে স্বস্তি নিয়ে বিরতিতে যায় কোরিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে সময় গড়ানোর সঙ্গে এশিয়ান কাপের দুইবারের চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ কোরিয়া আধিপত্য করে খেলে। তাদের প্রাণশক্তি, দক্ষতার সঙ্গে পেরে উঠল না বাংলাদেশের মেয়েরা। যে কারণে বাছাইয়ে ‘এইচ’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে হারের স্বাদ পায় তারা। বাছাই পর্বে তিন ম্যাচে দুটি জয় এবং একটি হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয় বাংলাদেশ। ফলে টুর্নামেন্টে চূড়ান্ত পর্বে খেলা নিশ্চিত করার জন্য অন্য দলগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে কোচ বাটলারের দল। কেননা বাছাইপর্বের আট গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও সেরা তিন রানার্সআপ অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার সুযোগ পায়। বাংলাদেশকে হারিয়ে টানা তিন জয়ে সর্বোচ্চ ৯ পয়েন্ট নিয়ে ‘এইচ’ গ্রুপের সেরা হয়ে মূল পর্বের টিকিট নিশ্চিত করে দক্ষিণ কোরিয়া।

গ্রুপসেরা হতে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ড্র করা দরকার ছিল বাংলাদেশের। এ সমীকরণ সামনে নিয়ে খেলতে নেমে দ্বিতীয় মিনিটে দারুণ একটা সুযোগ কড়া নাড়ে দুয়ারে। সতীর্থের লং পাস ধরে গোলরক্ষককে একা পেয়েছিলেন সাগরিকা, কিন্তু বলে স্পর্শ জোরে হওয়ায় শট নিতে পারেননি তিনি।

১৪ মিনিটে তৃষ্ণা রানী বক্সের ঠিক ওপরে বল পেয়েছিলেন, কিন্তু দুই ডিফেন্ডারের বাধা পার হতে ব্যর্থ হন তিমুর লেস্তের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করা এই ফরোয়ার্ড। তবে পরের মিনিটেই তৃষ্ণা এগিয়ে নেন দলকে। বক্সে ঢুকে গায়ের সঙ্গে সেঁটে থাকা ডিফেন্ডারের বাধা এড়িয়ে আড়াআড়ি পাস বাড়ান শান্তি মার্ডি, বল গোলকিপারের গ্লাভস ছুঁয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর আলতো টোকায় জালে জড়িয়ে দেন তৃষ্ণা। ১৮ মিনিটে চো হেইওং ভালো পজিশনে বল পেয়েও উড়িয়ে মারেন, এর পরের মিনিটেই সমতায় ফেরে দক্ষিণ কোরিয়া। বাঁ দিক থেকে আসা আক্রমণ আটকাতে পোস্ট ছেড়ে কিছুটা এগিয়েছিলেন স্বর্ণা রানী ম-ল। সতীর্থের পাস ধরে ফাঁকায় থাকা লি হায়েউন সহজেই খুঁজে নেন জাল। এরপর জিয়ং জিওনের শট আটকে বাংলাদেশের ত্রাতা স্বর্ণা। চোট পাওয়া শান্তিকে ২৪ মিনিটে তুলে বন্যা খাতুনকে নামান কোচ বাটলার।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে সাগরিকার বাম পায়ের শট সরাসরি যায় গোলকিপারের কাছে। বিরতির বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে দক্ষিণ কোরিয়ার আরেকটি প্রচেষ্টা আটকে বাংলাদেশকে সমতায় রাখেন স্বর্ণা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এগিয়ে যায় দক্ষিণ কোরিয়া। বাম দিক দিয়ে ওঠা আক্রমণ আটকাতে ডিফেন্ডাররা সবাই মনোযোগী হওয়ায় ডান প্রান্ত ফাঁকা জায়গা পেয়ে যান চো হেইওং।

সতীর্থের পাস ধরে অনায়াসে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। বাংলাদেশেরও পথ হারানোর শুরু। ৫৭ মিনিটে স্বর্ণার দৃঢ়তায় ব্যবধান বাড়েনি। থ্রু পাস ধরে চো হেইওং একা পেয়ে গিয়েছিলেন স্বর্ণাকে। বাংলাদেশ গোলকিপার দারুণ ক্ষিপ্রতায় ছুটে এসে পথ আগলে দাঁড়ান, তাতে দক্ষিণ কোরিয়া অধিনায়ক পারেননি শট পোস্টে রাখতে। তিন মিনিট পর অবশ্য চো হেইওংই বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে নিখুঁত শটে স্কোরলাইন করেন ৩-১। সফল স্পট কিকে ৮৭ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানো লি হায়েউন একটু পর হেডে আবারও জাল খুঁজে নেন। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে দক্ষিণ কোরিয়াকে ষষ্ঠ গোল এনে দেন জিন হাইয়েরিন। ফলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন কোরিয়ার খেলোয়াড়রা।