একটা সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে একজন লেগ স্পিনারের জন্য হাহাকার ছিল। জুবায়ের হোসেন লিখনকে দিয়ে সেই অভাব দূর করার চেষ্টা চালানো হয়েছিল, কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় লিখন হারিয়ে গেছেন। কেননা, লেগ স্পিনারকে খেলানোর বিলাসিতা দেখাতে সব সময় অনাগ্রহী ছিল বাংলাদেশ। তবে কঠিন পরিস্থিতি পেরিয়ে জাতীয় দলে এখন একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রিশাদ হোসেন। ২০২৩ সালের মার্চে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলে আত্মপ্রকাশের পর ওয়ানডে ক্রিকেটেও সাফল্য দেখাচ্ছেন রংপুর থেকে উঠে আসা এই তরুণ স্পিনার।
বিধ্বংসী বোলিংয়ের পাশাপাশি তার বিস্ফোরক ব্যাটিংও দলের জয়ে অবদান রাখছে। অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখানো রিশাদ অসাধারণ এক সাফল্যের গল্প রচনা করলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩৫ রান দিয়ে ৬ উইকেট শিকার করেন এই লেগ স্পিনার। বাংলাদেশের প্রথম ডানহাতি স্পিনার হিসেবে ৫ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েছেন রিশাদ। তার ঘূর্ণি জাদুতেই দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ওয়ানডে দল জয়ের মুখ দেখল। বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হয়েই এসেছেন তরুণ বোলার রিশাদ হোসেন।
রিশাদের বর্তমান অবস্থানে আসার পেছনে অনেকের অবদান রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ চ-িকা হাথুরুসিংহেকেই বেশি কৃতিত্ব দিতে হবে। ¯্রােতের বিপরীতে গিয়ে একজন লেগ স্পিনারকে খেলানোর সাহস দেখিয়েছেন এই লঙ্কান কোচ। হাথুরুসিংহের তাড়না এই লেগ স্পিনারের পথ সুগম করেছে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হাথুরুসিংহের সঙ্গে কৃতিত্ব দিতে চান তৎকালীন দুই নির্বাচককেও। রিশাদের উত্থানের সময়টায় জাতীয় দলের নির্বাচক ছিলেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু (প্রধান নির্বাচক) ও হাবিবুল বাশার সুমন।
তাদের কৃতিত্ব দিতে গিয়ে আশরাফুল বলেছেন, ‘হাথুরুসিংহেকে কৃতিত্ব কেন দিবেন না? হাথুরুসিংহের সাথে দুই নির্বাচক ছিলেন নান্নু ভাই ও সুমন ভাই। তাদেরও কৃতিত্ব দিব। তারা রিশাদকে ওই সময় ব্যাক করেছেন।’ একই সঙ্গে গোটা টিম ম্যানেজমেন্ট অর্থাৎ, অধিনায়কদেরও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আশরাফুল। তারা আস্থা রাখার কারণেই রিশাদ এখন দলের সম্পদে পরিণত হয়েছেন। আশরাফুল বলেন, ‘এটাই হয় ক্রিকেটে। নির্বাচক, কোচ, ক্যাপ্টেন বলেন, তাদের আশীর্বাদ না থাকলে কোনো খেলোয়াড় স্যাটেল হতে পারে না। হাথুরুসিংহের নির্বাচনের আশীর্বাদ ছিল যে আমরা ব্যাক করব। সেই কাজটাই হয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে নিয়মিত পারফর্ম করত। এখন ওয়ানডেতেও নিয়মিত পারফর্ম করছে। পারফর্ম করলে সিলেকশন সহজ হয়ে যায়।’
ওয়ানডেতে কোনো ডানহাতি স্পিনারের ৬ উইকেট ছিল না। ডানহাতি কোনো স্পিনারের ৫ উইকেটও ছিল না। বাংলাদেশের দুটি অপূর্ণতা এক ম্যাচেই ঘুচিয়ে দিলেন রিশাদ হোসেন। এমন কীর্তি নিয়ে রিশাদের প্রতিক্রিয়া, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ দিয়েছেন।’ বল হাতে যেমন আনন্দদায়ী ও সপ্রতিভ রিশাদ, ব্যাট যাতে যতটা কার্যকর, মাইক্রোফোন-রেকর্ডারের সামনে ততটা স্বতঃস্ফূর্ত নন তিনি কখনোই। রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে অনন্য কীর্তি গড়ার দিনেও ২৩ বছর বয়সি লেগ স্পিনার যেন ছিলেন একদমই নির্লিপ্ত। উচ্ছ্বাসের জোয়ার বা আবেগের খুব প্রকাশ দেখা গেল না তার কথায় বা কাজে। ব্যাটে-বলে এমন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখিয়েও বিশেষ কিছু মনে হচ্ছে না তার কাছে। রিশাদ বলেন, ‘তেমন কিছু বলার নেই। এটা আমার কাজ, আমাকে করতে হবে। আমি চেষ্টা করেছি সেরাটা দিতে। এটা নরমাল, আমার কাজ।’
মিরপুরের টার্নিং উইকেটে রিশাদকে গুগলি করতে হয়নি বা করার তেমন প্রয়োজনীয়তা হয়তো ছিল না এদিন। তবে সম্প্রতি এশিয়া কাপে এবং পরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে তাকে দারুণ কয়েকটি গুগলি করতে দেখা গেছে। গুগলি ভালোভাবে রপ্ত করতে পারলে নিশ্চিতভাবেই আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবেন তিনি। বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ খেলোয়াড়ি জীবনে বিখ্যাত ছিলেন গুগলির কারণে। রিশাদের গুগলিতে তার প্রভাব কতটা, সেই প্রশ্ন উঠল। কিন্তু রিশাদ সেটির গভীরে যেতে চাইলেন না। তিনি বলেন, ‘কাজ করছি, তো সেটা ম্যাচে দেখবেন।
এটা তো এখানে বলার কিছু নাই।’ আফগান স্পিনার রশিদ খানের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টিও খুব খোলাসা করলেন না তিনি। আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজের সময়ই মুশতাককে সঙ্গে নিয়ে তিনি রশিদের সঙ্গে কথা বলেছেন এক ঘণ্টার মতো সময়। সেটি নিয়ে কথা বলতেও খুব উৎসাহী মনে হলো না তাকে, বরং এখানেও অপেক্ষা করতে বললেন মাঠের পারফরম্যান্সের। রিশাদ বলেন, ‘আসলে লেগ স্পিনার হিসেবে টেকনিক্যাল ব্যাপার এবং প্রসেস নিয়ে কথা বলছিলাম। নরমালি একজন লেগ স্পিনারের সাথে যা কথা হয়, তেমনই।’ তিনি আরও বলেন, ‘কথা বলেছি আমার সামনের পথ কীভাবে যাব না যাবÑ এসব নিয়ে। লম্বা প্রক্রিয়ার ব্যাপার আরকি। এসব ইনশাল্লাহ সামনে দেখবেন..।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন