চোখে কালো রোদচশমা। মাথায় সাদা হ্যাট। পেছনের তির রাখা ব্যাগের সঙ্গে লাগানো ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা। অনুশীলনে যেন অন্য রকম আভা ছড়াচ্ছিল রাশা ইয়াহিয়া আহমেদের কালো হিজাবে ঢাকা চেহারায়। হেমন্তের সকালে পল্টন আউটার স্টেডিয়ামে গভীর মনোযোগে অনুশীলন করছিলেন ফিলিস্তিনের এই আর্চার। আগামী ৮-১৪ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে ২৪তম তির এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপস। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে কোনো আন্তর্জাতিক আরচারি প্রতিযোগিতায় খেলতে এসেছেন ফিলিস্তিনের আরচার।
বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার ফিলিস্তিনিদের মুক্তিসংগ্রামের একনিষ্ঠ সমর্থক। ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ করছে বাংলাদেশের জনগণ। অনেকে ইসরায়েল ও গাজা যুদ্ধকে সমর্থন করেÑ এমন প্রতিষ্ঠানের পণ্য বর্জন করছেন।
স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের জনগণের এই অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা জানেন রাশা। প্রথমবার বাংলাদেশে এসে ভীষণ মুগ্ধ তিনি, ‘হ্যাঁ, এই প্রথম বাংলাদেশে এসেছি এবং বিমানবন্দর থেকে শুরু করে এখানকার সবাই ভীষণ আন্তরিকতা নিয়ে আমাদের স্বাগত জানিয়েছে। এমনকি, বিমানবন্দর থেকে হোটেলে আসা পর্যন্ত সবাই ছিল ভীষণ আন্তরিক। সবাই খুশি এবং সবাই আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে, সহযোগিতা করছে।’ গাজায় জন্ম হলেও রাশা পড়াশোনা করেছেন ওমানে। মাসকটের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তোর ডিগ্রি সেরেছেন। বর্তমানে আরব আমিরাতে একটি প্রতিষ্ঠানের স্ট্র্যাটেজিক অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। মাত্র বছর তিনেক আগে আরচারিতে হাতে খড়ি রাশার। নিজের ক্যারিয়ার নিয়েও ভীষণ উচ্ছ্বসিত, ‘তিন বছর আগে থেকে আমি আরচারি শুরু করেছি। এখানে আসার আগে আমি অনেক আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশ নিয়েছি। কোরিয়া, কাতারসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি, যেগুলো ছিল খুবই উচু পর্যায়ের আয়োজন। তারা আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করেছে, এমনকি সবকিছু দিয়েছে, এত গোছালো যে কোনো কিছু চাওয়ার দরকার পড়েনি। যথাসময়ে যানবাহন এসেছে, অনুশীলনের সুবিধা মিলছে, মাঠ মিলছে, এখানকার প্রস্তুতি খুবই সুন্দর, সবকিছুই আন্তর্জাতিক মানের।’
ঢাকায় এসেও বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশনের আতিথেয়তায় মুগ্ধ তিনি, ‘আমি তো এখানে কোরিয়ার থেকে ভিন্ন কিছু অনুভব করছি না। সবই এক মানের।’ রাশা নারী রিকার্ভ এককে অংশ নেবেন। এই দলের বাকি তিন পুরুষ সদস্য আলী আলাহামাদ খালেদ, আওয়াদ সামি ও বাদওয়ান ওসায়েদ খেলবেন কম্পাউন্ড ইভেন্টে। ঢাকায় পদক জয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নামবে ফিলিস্তিন। সবার হয়ে রাশা সেটাই বললেন, ‘এখানে আমরা একটা দল হয়ে এসেছি। আমাদের আকাক্সক্ষা শুধু এখানে আসা নয়, প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া নয়, এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার, ভালো পারফরম করার এবং লড়াই করে সেরাদের পেছনে ফেলার লক্ষ্য নিয়েই আমরা এসেছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে প্রতিশ্রুত ত্রাণের মাত্র এক-চতুর্থাংশ গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল। দেশের বাইরে অবস্থান করে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য মন কাঁদে সব সময় রাশার, ‘গাজা আমার শহর। একজন ফিলিস্তিনি হিসেবে সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি ভালো নয়, তার পরও আমরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি, পতাকা উঁচিয়ে ধরি, তখন আমরা ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করি। এ জন্য আমাদের সবাই সাধুবাদ জানায়।’

