সব ফরম্যাটের ক্রিকেটেই ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার প্রর্দশনী দেখিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হতাশ করেছেন ব্যাটসম্যানরা। এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও ব্যাটিংয়ে ভরাডুবি হয়েছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের এই টানা ব্যাটিং ব্যর্থতার পেছনে ব্যাটসম্যানদের মানসিক সমস্যাটাকেই সামনে আনছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ আশরাফুল। আসন্ন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ সামনে রেখে প্রথমবারের মতো আশরাফুলকে জাতীয় দলের কোচিং প্যানেলে যুক্ত করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
সাবেক ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্পের বিদায়ের পর বিশেষজ্ঞ ব্যাটিং কোচ হিসেবে আশরাফুল নিয়োগ পেয়েছেন। এর আগে সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকেই দেওয়া হয়েছিল ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব। তবে এই সময়ে দলের ব্যাটিং পারফরম্যান্সের ধারাবাহিক অবনতি হয়েছে, যে কারণে এবার আশরাফুলকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে কোচ হিসেবে ব্যাটসম্যানদের খেলার টেকনিক্যাল দিকের চেয়ে মানসিক দিক উন্নত করার বিষয়েই বেশি মনোযোগ দিতে চান আশরাফুল। ব্যাটিং কোচ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া আশরাফুল প্রায় ১১ বছর পর আবারও জাতীয় দলের ড্রেসিং রুমে ফিরছেন। ফিক্সিং কেলেঙ্কারির কারণে আট বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে তিনি ক্রিকেটে ফেরার চেষ্টা করেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলোয়াড় হিসেবে ফিরে আসতে পারেননি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে আশরাফুল জানান, এখন তার মনোযোগ কোচিংয়ের দিকেই। কারণ তিনি বিশ^াস করেন, এটি তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুনভাবে অবদান রাখার সুযোগ করে দেবে। আশরাফুল বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে আমি পরিকল্পনা করছিলাম যে, ক্রিকেট খেলা শেষ করার পরও আমি মাঠে থাকতে চাই এবং কোচিংয়ে আসতে চাই।
আমি সুযোগ পেয়েছি এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিÑ দুই মৌসুম গ্লোবাল সুপার লিগে রংপুর রাইডার্সের সঙ্গে কাজ করেছি, এক বছর বিপিএলে ছিলাম আর এবার এনসিএলে (ন্যাশনাল ক্রিকেট লিগ) কাজ করছি। আমি যাদের সঙ্গে এখন কাজ করব, তাদের সবার সঙ্গেই খেলেছিÑ চাই সেটা হোক আন্তর্জাতিক বা ঘরোয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘আবারও বাংলাদেশ দলের ড্রেসিং রুমে ফিরতে পারছি, এটা আমার কাছে দারুণ অনুভূতি। আমি সেখানে ১৩ বছর খেলেছি, অনেক কোচের অধীনে খেলেছি, অনেক কিছু দেখেছি। এখন সেই অভিজ্ঞতাগুলোই আমি আমাদের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ভাগাভাগি করব।’ আশরাফুলের মতে, খেলোয়াড়দের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে তিনি মূলত মানসিক দিক নিয়েই কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি এখন খেলোয়াড়দের সঙ্গে কাজ করার সময় যা শেয়ার করি তা হলোÑ আমি কেন সফল হয়েছিলাম, আবার কেন হইনি; আমি কীভাবে ধারাবাহিক হয়েছিলাম এবং কখন সেই ধারাবাহিকতা হারিয়েছিলাম। এই খেলায় টেকনিক্যালের চেয়ে মানসিক দিকটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মন পরিষ্কার থাকলে ব্যাটিং অনেক সহজ হয়ে যায়, পারফরম্যান্সও উন্নত হয়। আমি জাতীয় দলে এ বিষয়গুলো নিয়েই কাজ করব।’ আশরাফুল জানান, তিনি খেলোয়াড়দের ব্যাটিং টেকনিকে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার পক্ষে নন। কারণ প্রত্যেকেরই নিজস্ব খেলার ধরন থাকে। আশরাফুল বলেন, ‘টেকনিকে বড় পরিবর্তন আনার দরকার নেই। চন্দরপল কীভাবে খেলত, দেখেছেন তো? ওর ভঙ্গি ছিল একেবারে আলাদা, তবু হাজার হাজার রান করেছে। কেন? কারণ সে মানসিকভাবে শক্ত ছিল।
আমি বিশ্বাস করি, ক্রিকেটে যত মানসিকভাবে শক্ত হওয়া যায়, ততই ভালো খেলা যায়। আমি সেই মানসিক শক্তিটা গড়ে তুলতেই সাহায্য করতে চাই।’ টেস্ট দল নিয়ে আত্মবিশ্বাসী আশরাফুল। কারণ দলটি অভিজ্ঞ। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে শক্তির চেয়ে টাইমিং নিয়ে বেশি কাজ করতে চান আশরাফুল। তিনি বলেন, ‘সিরিজটা টেস্ট দিয়ে শুরু হবে। টেস্ট দলটা বেশ অভিজ্ঞÑ মুশফিক আছে, শান্ত অধিনায়ক হিসেবে আছে, মিরাজ, লিটন, মুমিনুলÑ সবাই আছে। তাই টেস্ট দলে কাজ করা সহজ হবে বলে মনে করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আমরা শেষ সিরিজ বাদে চারটি সিরিজ জিতেছি। তবু এই ফরম্যাটে আমাদের ব্যাটসম্যানদের আরও পারফর্ম করার সুযোগ আছে। আমি সেই দিকেই কাজ করব। আমি ক্রিকেটীয় শট বা টাইমিং নিয়ে কাজ করতে চাই, কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বল ১৪০ কিলোমিটার বেগে আসে। তাই এখানে পাওয়ার হিটিংয়ের চেয়ে টাইমিং অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি সেই বিষয়গুলোই খেলোয়াড়দের সঙ্গে শেয়ার করব।’ আশরাফুল আরও জানান, সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক একদমই খারাপ নয়।

