চলতি বছরের মার্চে জাতীয় ফুটবল দলে দেওয়ান হামজা চৌধুরীর আত্মপ্রকাশের পর এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে এখনো জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। এরপর শমিত সোম, ফাহামিদুল ইসলাম, জায়ান আহমেদ, কিউবা মিচেলের অভিষেক হয়েছে বাংলাদেশ দলে। কিন্তু তাদের কেউই এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে জয়ের স্বাদ পাননি। আগামী ১৮ নভেম্বর এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এক ঝাঁক প্রবাসী ফুটবলার নিয়ে এই ম্যাচে ‘প্রথম’ জয়ের খোঁজে কোচ হাভিয়ের কাবরেরার দল।
এ পর্যন্ত চার ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের অর্জন দুটি ম্যাচে ড্র করা। ভারতের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে শিলংয়ে গোলশূন্য ড্র করে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। এরপর ঘরের মাঠ জাতীয় স্টেডিয়ামে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে লড়াই জমিয়ে ২-১ গোলে হেরে যান হামজারা। গত অক্টোবরে হোম ও অ্যাওয়ে- দুই ম্যাচে দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলে তারা। হোম ম্যাচে ৪-৩ গোলে হারের পর অ্যাওয়ে ম্যাচে ১-১ ব্যবধানে ড্র করে বাংলাদেশ। বাছাই পর্বের মাঝে ভুটানের ২-০ গোলে একটি প্রীতি ম্যাচে জিতেছেন হামজা, জামালরা। এরপর আর জয় পায়নি তারা। সর্বশেষ ঘরের মাঠে নেপালের বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করলেও ম্যাচটিতে জয়ের পথেই ছিল লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। কিন্তু শেষ মুহূর্তের গোলে জয় হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের। যেখানে রক্ষণভাগ ও গোলরক্ষকের দুর্বলতা ফুটে ওঠে। তবে আর ভুল নয়, ভারতের বিপক্ষে জিততে চান হামজা, শমিতরা। ভারতকে হারানোর ব্যাপারে আত্মবিশ^াসী বাংলাদেশ দল।
ভারত ম্যাচে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ রাখার ব্যাপারে আশাবাদী কানাডা প্রবাসী মিডফিল্ডার শমিত সোম। একের পর এক ম্যাচে শেষ দিকে মনোযোগ হারিয়ে গোল হজমের ধারা থেকে বেরিয়ে আসাটাও জরুরি। শমিতের বিশ^াস, ভারতের বিপক্ষে সব কাজ ঠিকঠাক করতে পারবেন তারা। শমিত বলেন, ‘মিডফিল্ডের নিয়ন্ত্রণ রাখার ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী। আমি মনে করি, পুরো দল, গোলকিপার, ডিফেন্স, মিডফিল্ড, স্ট্রাইকিংÑ সব পজিশনের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ^াস আছে যে, আমরা ম্যাচটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব, জিততে পারব। বিগত ম্যাচগুলোতে আমাদের পারফরম্যান্স ভালো হয়েছে, কিন্তু জয়টা পাচ্ছি না। জয়টা আমাদের পাওয়া উচিত। আশা করি, আমরা এবার সেটা পাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফুটবলে এমন হয় (শেষ দিকে মনোযোগ হারানো), তাই না? আমরা কেবল ভাগ্যকে পক্ষে পাচ্ছি না। এমনকি নেপালের বিপক্ষে ম্যাচে ওরা যে কর্নার কিক পেয়েছে, ওইটা আসলে মনে হয় অফসাইডও ছিল, তাই না? কিন্তু ফুটবলে এগুলো হয়। জানি না, কী কারণে আমরা মনোযোগ হারাচ্ছি, কিন্তু আশা করি, ভাগ্যকে সামনে পাশে পাব, মনোযোগ হারাব না এবং আমরা যেন ওভাবে গোল হজম না করি। মূল বিষয় হলো, আমাদের মনোযোগ ধরে রাখতে হবে শেষ বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত।’
ভারতের বিপক্ষেও শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে জয় হাতছাড়া হওয়ার রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। ২০১৯ সালে কলকাতার সল্টলেকে ৮৮ মিনিটে গোল হজম করে ভারতের বিপক্ষে ১-১ ড্র করেছিল বাংলাদেশ। তবে এবার ঘরের মাঠে শেষ দিকে আর গোল হজম করতে চায় না কোচ কাবরেরার দল। সর্বশেষ ভারতের বিপক্ষে ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেবার মতিউর মুন্নার গোল্ডেন গোলে ২-১ ব্যবধানে ভারতকে হারায় লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। এবার প্রবাসী ফুটবলারদের হাত ধরে ভারতের বিপক্ষে জয়ের গল্প রচনা করতে চায় বাংলাদেশ।
এদিকে, ভারতের বিপক্ষে প্রথম খেলার অপেক্ষায় শমিত সোম। প্রতিপক্ষ ভারত প্রসঙ্গে এই ফুটবলার জানান, ভারত ভালো দল, কিন্তু তাদেরও দুর্বলতা আছে। ভারতের মিডফিল্ড লাইন ও ডিফেন্স লাইনের মাঝে ফাঁক থাকে, জায়গা থাকতে পারে। নেপাল যেভাবে ডিফেন্ড করেছে, ভারত সেভাবে ডিফেন্ড করতে পারবে না, স্ট্রাকচার ওইভাবে রাখতে পারবে না। এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ। শমিত বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত থাকব। আশা করি, আমরা জিততে পারব। আমরা ভালো খেলতে পারি, ভালো পারফরম্যান্স দিতে পারি। যে জয়টা খুঁজছি আমরা, এই মঙ্গলবারের (১৮ নভেম্বর) ম্যাচে সেটা আশা করি পাব।’

