ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫

প্রথম বাংলাদেশির ১০০তম টেস্ট খেলার রেকর্ড

ইতিহাস গড়ার দিন সংবর্ধিত মুশফিক

মাঠে ময়দানে প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০৩:০২ এএম

মিরপুরে গতকাল থেকে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হয়েছে। এই ম্যাচে খেলতে নেমেই ইতিহাসের পাতায় নাম তুললেন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০তম টেস্ট ম্যাচ খেলছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। টেস্ট ইতিহাসে ৮৪তম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট ম্যাচ খেলছেন মুশফিক। তার এই ইতিহাস গড়ার দিন আবেগ ও গৌরবমাখা আয়োজনে মুশফিককে সম্মান জানাল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এই বিশেষ দিন স্টেডিয়ামে মুশফিককে ঘিরে আনন্দমুখর আবহ তৈরি হয় মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে।

মুশফিকের কোলে শিশুকন্যা, হাত ধরে আছে পুত্র। স্ত্রী ও বাবা-মাও তার পাশে ছিলেন। ছিলেন তার প্রথম টেস্ট ও শততম টেস্টের সতীর্থরা। ঘটা করা আয়োজনে সংবর্ধনা পেলেন মুশফিক। সকাল সোয়া ৯টায় টসের পর শুরু হয় আয়োজন। শুরুতেই মুশফিকের হাতে ‘১০০’ খোদাই করে লেখা বিশেষ টেস্ট ক্যাপ তুলে দেন সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। যিনি সেই ২০০৫ সালে লর্ডসেও তার মাথায় পরিয়ে দিয়েছিলেন টেস্ট ক্যাপ। তখনকার ১৮ বয়সি বালক চেহারায় মুশফিক এখন পোক্ত, ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় ঐতিহাসিক অর্জনের মুহূর্তে টেস্ট ক্যাপ ক্যাসকেড তুলে দেন সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান। এরপর সতীর্থদের অটোগ্রাফ দেওয়া প্রথম টেস্ট ও শততম টেস্ট জার্সি তার হাতে তুলে দেন হাবিবুল বাশার ও নাজমুল হোসেন শান্ত। বর্তমান টেস্ট অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ‘অভিনন্দন। আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য দুর্দান্ত অর্জন। আপনার সঙ্গে সবসময় খেলা উপভোগ করি। আমি আপনাকে অনুসরণ করি, অনুপ্রাণিত হই এমনকি ছোটবেলা থেকে। সবাই আপনার পরিশ্রম নিয়ে বলে, আমি বলব আপনি সবসময় দলের জন্য খেলেন, দলের জন্য নিজেকে নিংড়ে দেন। আপনি ব্যক্তিগত মাইলস্টোন নয়, দলের জন্য খেলেন। এটাই তরুণদের অনুপ্রাণিত করে।’ সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সবাইকে ধন্যবাদ জানান মুশফিকও। তিনি বলেন,  ‘ধন্যবাদ সবাইকে। আমার পরিবারকে ধন্যবাদ। এই চলার পথে যারাই ছিলেন সতীর্থ, কোচ প্রত্যেককে ধন্যবাদ। আমি বাংলাদেশের ক্রিকেটের আগামীর জন্য শুভকামনা জানাই। আয়ারল্যান্ড দলকেও ধন্যবাদ তারা এখানে উপস্থিত হয়েছে বলে।’ বিশেষ আয়োজনে মাঠে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম ক্রেস্ট তুলে দেন মুশফিকের হাতে।

সাকিব-মাহমুদউল্লাদের ভালোবাসা

বিকেএসপির বড় ভাই, সাবেক সতীর্থ মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্টে খেলতে না পারার আক্ষেপ আড়াল করেননি কয়েক হাজার কিলোমিটার দূর থাকা সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ দলে পাশাপাশি হাত ধরে দীর্ঘ সময় পার করা সাকিব স্মৃতিচারণ করে ফিরে গেলেন পুরোনো সময়ে। মুশফিকের অভিষেক টেস্ট টিভিতে দেখার স্মৃতি তুলে ধরে শততম টেস্টের প্রতিটি বলও দেখার প্রতিজ্ঞা করেছেন তিনি। বাংলাদেশের ইতিহাসের সফলতম ক্রিকেটার সাকিব রাজনৈতিক কারণে এখন দলের বাইরে। দেশে ফিরতে না পারা সাকিব খেলে বেড়ান ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট। বর্তমানে আবুধাবি টি-টেন লিগ খেলছেন তিনি। সেখান থেকে মুশফিকের শততম টেস্ট উপলক্ষে বার্তা দেন সাকিব। নিজের ফেসবুক পেজে ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার লিখেছেন, ‘লর্ডসে যখন আপনি আপনার প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলছিলেন, আমি বিকেএসপিরর রিক্রিয়েশন রুম থেকে প্রতিটি বল দেখেছিলাম। সেই দিন থেকেই আপনি আমাকে এবং বাংলাদেশের অসংখ্য ক্রিকেটারকে অনুপ্রাণিত করেছেন।’ সাকিব আরও বলেন, ‘আপনি অনেকদিন ধরে খেলছেন। আপনার খেলায় সবকিছু উজাড় করে দিয়েছেন। বয়সভিত্তিক দলে যখন আপনি নেতৃত্ব দিতেন, তখন থেকেই আপনাকে আমি আমার অধিনায়ক হিসেবে দেখেছি। আর যতদিন ক্রিকেট খেলব, আপনি সবসময়ই আমার অধিনায়ক হয়ে থাকবেন। মুশফিক ভাই, এই বিশেষ মুহূর্তে আপনার ১০০তম টেস্ট ম্যাচের জন্য আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। যে অর্জন যেকোনো ক্রিকেটারের জন্যই ইতিহাস। যেমনভাবে আপনার প্রথম ম্যাচের প্রতিটি বল দেখেছিলাম, তেমনি আপনার ১০০তম টেস্ট ম্যাচেও আপনি যে প্রতিটি বল খেলবেন, আমি দেখব।’ ঘরের মাঠে টেস্ট খেলে অবসর নিতে চাওয়া সাকিবের ইচ্ছা পূরণ হয়নি। ঐতিহাসিক মুহূর্তে মুশফিককে সঙ্গ দিতে না পারার আক্ষেপে পুড়ছেন তিনি, ‘আশা করি আপনি এই ম্যাচটা উপভোগ করবেন। আর ইচ্ছে করে, ইশ! যদি আমি আপনার সঙ্গে এই ম্যাচটা খেলতে পারতাম এবং মাঠেই আপনার গৌরব উদযাপন করতে পারতাম।’

এদিকে, মুশফিকের শততম টেস্ট নিয়ে নিজের অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বলেছেন, ‘বিশেষ মুহূর্ত। এটি তার এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অনেক বড় অর্জন। এই ম্যাচটা শুধু একটা টেস্ট নয়... কারণ আমি কাছ থেকে দেখেছি কী পরিমাণ পরিশ্রম সে প্রতিদিন করেছে, অনেক নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করেছে। এমন মাইলফলকে পৌঁছা অসাধারণ বিষয়।’ জাতীয় দলের সতীর্থ হওয়ার পাশাপাশি মুশফিকের সঙ্গে পারিবারিক লেনদেনও রয়েছে মাহমুদউল্লাহর। সেই সুবাদে লম্বা সময় কাছ থেকে দেখেছেন তাকে। ওই অভিজ্ঞতা থেকে মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘শৃঙ্খলাই মুশফিকের এই সাফল্যের মূল রহস্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় শৃঙ্খলা, আগ্রহ ও ত্যাগ থেকে শুরু করে প্রতিটি অনুকরণীয় বিষয়ে তার বিচরণ আছে। শৃঙ্খলিত জীবন, সব ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা... আমি তাকে শুভকামনা জানাই।’

রিকি পন্টিংয়ের বিশেষ বার্তা

শততম টেস্ট খেলার কীর্তি গড়ে দেশ-বিদেশের ক্রিকেটারদের অভিনন্দনে সিক্ত হচ্ছেন মুশফিক। তার এই মাইলফলক উপলক্ষে আইসিসির ফেসবুক পেজে শেয়ার করা ভিডিওতে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং। বিশেষ বার্তায় পন্টিং বলেন, ‘মুশফিকের অসাধারণ অর্জন। (১০০ টেস্ট) প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এটা করেছেন। আমি সবসময়ই বলি, একজন মানসম্মত ক্রিকেটারকে বিচার করার সবচেয়ে বড় মানদ- হলো তার দীর্ঘসময় ধরে উচ্চমানের পারফরম্যান্স ধরে রাখার ক্ষমতা।’ পন্টিং যোগ করেন, ‘যখন আপনি ৭০, ৮০, ৯০ টেস্ট খেলে ফেলেন, তখন প্রতি বছরই আপনাকে নিজেকে বদলে নেওয়ার, নতুনভাবে উন্নতি করার উপায় খুঁজে বের করতে হয়। আর ক্যারিয়ারের শেষের দিকে এটা করা সহজ নয়। তাই এটা দুর্দান্ত একটি অর্জন। তার ১০০তম ম্যাচের জন্য আমার শুভকামনা রইল। আশা করি, এটি তার ক্যারিয়ারের সেরা টেস্ট ম্যাচগুলোর একটি হবে।’