বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করে ইতিহাস গড়েছে মাত্র দেড় লাখ মানুষের দেশ কুরাসাও। তাদের পাশাপাশি চমক দেখিয়ে বিশ^কাপ নিশ্চিত করেছে হাইতি ও পানামাও। মঞ্চ ছিল প্রস্তুত। ইতিহাসের দুয়ার খুলে সেই মঞ্চে পৌঁছে গেছে কুরাসাও। ক্যারিবিয়ান সাগরের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রটি জায়গা করে নিয়েছে ২০২৬ বিশ্বকাপে। কনক্যাকাফ অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ‘বি’ গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্ব আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে দেশটি। বাছাইয়ের শেষ দিনে জ্যামাইকার বিপক্ষে স্রেফ একটি পয়েন্ট প্রয়োজন ছিল তাদের। বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালের ম্যাচটিতে গোলশূন্য ড্র করে সেই পয়েন্ট আদায় করে নেয় তারা।
গত জানুয়ারিতে কুরাসাওয়ের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের তথ্য অনুযায়ী, ৪৪৪ বর্গকিলোমিটার দেশটির জনসংখ্যা ১ লাখ ৫৬ হাজার। বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়া সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ এটিই। রেকর্ডটি আগে ছিল আইসল্যান্ডের। ২০১৮ বিশ্বকাপে খেলেছিল সাড়ে তিন লাখ জনসংখ্যার দেশটি। নেদারল্যান্ডস রাজ্যের সাংবিধানিক দেশ কুরাসাও। মূল কুরাসাও দ্বীপ ও জনবসতিহীন ‘লিটল কুরাসাও’ দ্বীপ নিয়ে দেশটি গঠিত। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এখন তারা আছে ৮২ নম্বরে। অপরাজিত থেকে বাছাই শেষ করল তারা। ছয় ম্যাচের তিনটিতে জয় আর তিনটি ড্রয়ে তাদের পয়েন্ট ১২। আগে বিশ্বকাপ খেলা জ্যামাইকা ও ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাগোকে পেছনে ফেলেছে তারা, গ্রুপের অন্য দল বারমুডাকে হারিয়েছে ৭-০ গোলে। দলটির কোচ ডিক আডভোকাট, বিশ^ ফুটবলের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় কোচদের একজন তিনি। ৪৫ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে নিজ দেশ নেদারল্যান্ডসতে তিন দফায় কোচিং করানোসহ বেলজিয়াম, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক দলকে কোচিং করিয়েছেন তিনি।
৭৮ বছর বয়সি কোচ অবশ্য জ্যামাইকার বিপক্ষে এই ম্যাচটিতে থাকতে পারেননি ব্যক্তিগত কারণে। কিন্তু তার দল কাজটুকু শেষ করেছে ঠিকই। কুরাসাওয়ের সঙ্গে এ দিন এই অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে হাইতি ও পানামাও। ‘সি’ গ্রুপে নিকারাগুয়াকে হারিয়ে ৫২ বছর পর বিশ্বকাপে ঠাঁই পেয়েছে হাইতি। আগে একবারই বিশ্বকাপ খেলেছে তারা, ১৯৭৪ আসরে। হাইতির বিশ^কাপে খেলতে পারাও দারুণ চমকপ্রদ। সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলগুলির সংঘর্ষে দেশটিতে প্রায় যুদ্ধাবস্থা চলছে, ১৩ লাখ মানুষ হয়েছের ঘরছাড়া, দেশে চলছে দুর্ভিক্ষ। নিজেদের দেশে ম্যাচ খেলার পরিস্থিতি নেই তাদের, ঘরের মাঠের ম্যাচগুলি তারা খেলছে কুরাসাওয়ে। তাদের কোচ সেবাস্তিয়াঁ মিনিয়ে দেড় বছর আগে নিয়োগ পেলেও এখনও সেই দেশেই যেতে পারেননি নিরাপত্তার ঝুঁকিতে। সেই দেশই সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে হন্ডুরাস ও কোস্টারিকাকে ছাপিয়ে বিশ^কাপের ঠিকানা পেয়ে গেছে। শেষ রাউন্ডের আগে গোল ব্যবধানে হন্ডুরাসের চেয়ে পিছিয়ে থেকে দুইয়ে ছিল হাইতি।
কিন্তু শেষ দিনে নিকারাগুয়াকে হারায় তারা ২-০ গোলে, হন্ডুরাস গোলশূন্য ড্র করেছে কোস্টা রিকার সঙ্গে। শেষ রাউন্ডের আগে গোল ব্যবধানে সুরিনামের চেয়ে পিছিয়ে থেকে দুইয়ে ছিল পানামাও। শেষ রাউন্ডে তারা এল সালভাদরকে হারায় ৩-০ গোলে। অন্য ম্যাচে গুয়াতেমালার কাছে ৩-১ গোলে হেরে যায় সুরিনাম। সরাসরি বিশ্বকাপে যেতে না পারলেও জ্যামাইকা ও সুরিনামের আশা শেষ হয়ে যায়নি। আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফে জায়গা করে নিয়েছে দেশ দুটি। এই দুই দলকে নিয়ে আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফের ছয় দলও চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অন্য চার দল বলিভিয়া, কঙ্গো, ইরাক ও নিউ কালেডোনিয়া। আগামী মার্চে এই প্লে-অফ থেকে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেবে দুটি দল।

